
শারদীয় দুর্গোৎসবের বিজয়া দশমীতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে মা দুর্গার বিদায়ের মুহূর্তে মিশে গেল মানবতার আহ্বান। সৈকতের বালুকাবেলায় প্রতিমা বিসর্জনের আনুষ্ঠানিকতার সঙ্গে উচ্চারিত হলো ফিলিস্তিনের শান্তি ও মুক্তির প্রার্থনা। লাখো মানুষের সমাগমে এই আবেগঘন দৃশ্য যেন এক অনন্য মানবিক সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দিল।
বৃহস্পতিবার বিকেলে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বিজয়া দশমীর আয়োজনে মানুষের ঢল নামে। জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের নেতা অরুপ শর্মা মঞ্চ থেকে বলেন, “আজ আমরা দেবী দুর্গার বিদায় জানাচ্ছি। তবে মানবতার সংগ্রাম চিরন্তন। ফিলিস্তিনের মানুষের শান্তি ও মুক্তির জন্য আমরা প্রার্থনা করছি।” এই বক্তব্যে উপস্থিত জনতার মধ্যে মানবিক সমবেদনার জোয়ার বয়ে যায়।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি উদয় শঙ্কর পাল জানান, “এবারের দুর্গোৎসব কক্সবাজারে শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখরভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এই আয়োজন শুধু ধর্মীয় সম্প্রীতিই নয়, মানবিক মূল্যবোধের প্রকাশও ঘটিয়েছে। বিসর্জনের মুহূর্তে ফিলিস্তিনের মুক্তির প্রার্থনা আমাদের সহমর্মিতার বহিঃপ্রকাশ।”
সৈকতের বালুচরে তরুণ-তরুণীদের একটি দল হাতে ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়ায়। তাদের মধ্যে অতসী দে বলেন, “বিজয়ার শুভেচ্ছার পাশাপাশি আমরা বিশ্বশান্তি চাই। ফিলিস্তিনের মানুষ যেন মুক্তভাবে বাঁচতে পারে, সেটাই আমাদের আহ্বান।” একই দলের আবদু রশিদ মানিক যোগ করেন, “ধর্ম-বর্ণের ভেদাভেদ ভুলে এখানে মানবতার জয়গান শোনা গেছে। বিজয়ার আনন্দের সঙ্গে আমরা ফিলিস্তিনের মুক্তির প্রার্থনাকে এক করেছি।”
পূণ্যার্থীদের মধ্যেও ছিল গভীর আবেগ। রামু থেকে আগত সীমা দত্ত বলেন, “আজকের দিনটা শুধু বিদায়ের নয়, মানবতার ডাকও শোনা গেছে। সমুদ্রের ঢেউয়ের সঙ্গে ফিলিস্তিন মুক্তির আহ্বান শুনে সত্যিই অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে।” স্থানীয় দর্শনার্থী নুরুল হাসান, যিনি মুসলিম, বলেন, “বিজয়া দশমীর এই দৃশ্যে উপস্থিত থেকে আমি অভিভূত। এখানে ধর্ম-বর্ণের কোনো ভেদাভেদ নেই, শুধু সম্প্রীতি রয়েছে।”
আবহাওয়া যেন এই বিদায়ের মুহূর্তে বিষণ্নতার ছোঁয়া দিয়েছে। ভোর থেকে মেঘলা আকাশ ও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি সত্ত্বেও লাখো মানুষ বৈরি আবহাওয়াকে উপেক্ষা করে সৈকতে জমায়েত হন। বিজয়ার আনুষ্ঠানিকতায় তারা মেতে ওঠেন উৎসবের আমেজে।
বিজয়ার মঞ্চ থেকে উচ্চারিত হয় সম্প্রীতির বাণী— “ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।” এই স্লোগানের সঙ্গে যুক্ত হয় মানবতার প্রার্থনা— “ফ্রি প্যালেস্টাইন।” জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, এবার কক্সবাজারে ৩১৭টি পূজামণ্ডপে দুর্গোৎসব উদযাপিত হয়।
নিরাপত্তার দিক থেকেও ছিল কঠোর ব্যবস্থা। জেলা পুলিশের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, “বিজয়া দশমী উপলক্ষে প্রায় পাঁচ শতাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন ছিল। সেনাবাহিনীও মাঠে ছিল। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুরো সৈকত এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়েছিল।”
বিজয়ার মঞ্চে জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বক্তব্য দেন এবং সম্প্রীতির বার্তা প্রচার করেন। এই আয়োজন কক্সবাজারের সৈকতে শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, মানবতার এক সর্বজনীন উদযাপন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলো।
Comments