ছয় বছরের অপেক্ষাতেও অসম্পূর্ণ বামনার মডেল মসজিদ, ক্ষুব্ধ মুসল্লিদের মানববন্ধন
“আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার”—এই পবিত্র আজানের ধ্বনি মডেল মসজিদের মিনার থেকে শোনার অপেক্ষায় ছয় বছর ধরে প্রহর গুনছেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। দু’দফা ঠিকাদার পরিবর্তন সত্ত্বেও নির্মাণকাজের শামুকগতি এখন স্থানীয়দের মধ্যে হতাশা ও অসন্তোষের জন্ম দিয়েছে। এই অবস্থার প্রতিবাদে বামনা প্রেসক্লাবের উদ্যোগে উপজেলার গোলচত্বরে মানববন্ধন করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা, দাবি তুলেছেন ঠিকাদার অপসারণ করে দ্রুত কাজ সম্পন্ন করার।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও গণপূর্ত বিভাগের সূত্র থেকে জানা যায়, সরকারের উদ্যোগে সারা দেশে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের লক্ষ্যে এই প্রকল্প শুরু হয়েছে। এসব মসজিদ বিশুদ্ধ ইসলাম প্রচারের অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে, যেখানে ইসলামিক বই বিক্রয়, ইমাম প্রশিক্ষণ, গবেষণা, হেফজখানা, শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমসহ বিভিন্ন উদ্যোগ পরিচালিত হবে। এছাড়া জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কর্মসূচিও এখান থেকে চালানো হবে। বামনায় এই মডেল মসজিদটি স্থানীয় মুসল্লিদের জন্য একটি স্বপ্নের মতো ছিল, কিন্তু বাস্তবে তা এখনো অধরা।
জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২৪ মার্চ প্রথম ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ‘এএসআই জেবি’ কাজ শুরু করে। এই প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী পার্শ্ববর্তী মঠবাড়িয়া পৌরসভার মেয়র ফেরদৌস আহমেদ। কিন্তু নির্মাণকাজে অসন্তোষজনক অগ্রগতির কারণে কর্তৃপক্ষ দ্বিতীয় দফায় টেন্ডার করে। এবার মসজিদ নির্মাণের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৩ কোটি ১৫ লাখ ৫১ হাজার ১৬ টাকায়। ২০২৪ সালের ২৪ জানুয়ারি দায়িত্ব পায় ‘এমকেটি’ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী রিপন (ওরফে রাঙ্গা রিপন), যিনি আওয়ামী লীগের একজন নেতা এবং বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছেন। তার অনুপস্থিতিতে কাজের গতি আরও মন্থর হয়ে পড়েছে। জেলার ছয়টি উপজেলার মধ্যে শুধু বামনায় এই প্রকল্প এখনো সম্পূর্ণ হয়নি, যা স্থানীয়দের মধ্যে গভীর অসন্তোষের সৃষ্টি করেছে।
এই পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে বামনা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সদস্য আবু নাসের সিদ্দিক গোলাম কিবরিয়া গত ১৫ অক্টোবর বরগুনা জেলা প্রশাসক ও জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ জানান। তারই ধারাবাহিকতায় ১৬ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) সকাল ১১টায় গোলচত্বরে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার আবুল কালাম আজাদ রানা, যুগ্ম-আহ্বায়ক মিজানুর রহমান মজনু, উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর সভাপতি হাফেজ মাওলানা সাইদুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক সাইফুল্লাহ মানসুর, উপজেলা ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের সভাপতি আলহাজ সোবাহান খান, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক রায়হান নাজির ধলু, উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব সজিব হোসেন মুন্নাসহ অনেক স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসল্লি।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, এই মসজিদটি শুধু ধর্মীয় স্থান নয়, সমাজের সামগ্রিক উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু। দীর্ঘায়িত বিলম্ব শুধু হতাশাই নয়, সরকারি প্রকল্পের প্রতি আস্থাহীনতাও তৈরি করছে।
এ বিষয়ে বর্তমান ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার সুজন সাংবাদিকদের জানান, “আমাদের দুই স্বত্বাধিকারীর একজন রাজনৈতিক মামলায় জেলে ছিলেন, অন্যজনের মৃত্যুর পর আমি (সুজন) ও রিপনের স্ত্রী কাজের দায়িত্ব নিয়েছি। অর্থনৈতিক সংকটের কারণে কাজ কিছুটা মন্থর হয়েছে, তবে অনতিবিলম্বে এটি সম্পন্ন করা হবে।”
বরগুনা জেলার গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোল্লা রবিউল ইসলাম বলেন, “ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে দ্রুত কাজ সম্পন্ন করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। অগ্রগতি সন্তোষজনক না হলে দাপ্তরিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
স্থানীয়রা আশা করছেন, এই মানববন্ধন ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপে শীঘ্রই মসজিদের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে, এবং তাদের স্বপ্নের আজানের ধ্বনি বাস্তবে পরিণত হবে।
Comments