ইছামতি নদীতে ব্রিজ না থাকায় তিন উপজেলার মানুষের দুর্ভোগ

সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার রতনকান্দি ইউনিয়নের একডালা গ্রামে ইছামতি নদীর উপর স্থায়ী ব্রিজের অভাবে তিন উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। স্বাধীনতার পর থেকে স্থানীয়দের ব্রিজ নির্মাণের দাবি থাকলেও এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে, অস্থায়ী বাঁশের সাঁকো ও খেয়া নৌকার উপর নির্ভর করে তাদের দৈনন্দিন জীবনযাপন করতে হচ্ছে।
সরেজমিনে একডালা ঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, নদীর উপর বাঁশ ও কাঠ দিয়ে তৈরি একটি অস্থায়ী সাঁকোই মানুষের পারাপারের একমাত্র মাধ্যম। স্থানীয় বাসিন্দা রবি নিজ উদ্যোগে এই সাঁকো তৈরি করেছেন এবং পারাপারের জন্য সামান্য টাকা নেন। তিনি জানান, বর্ষা মৌসুমে পানির স্রোতে সাঁকো ভেসে গেলে খেয়া নৌকাই একমাত্র ভরসা হয়ে ওঠে। এই ঘাট ব্যবহার করে বগুড়ার ধুনট উপজেলার খাটিয়ামারী, মথুরাপুর, কাশিয়াহাটা, বিষারদিয়ার, শালুয়াবাড়ীসহ ৮-১০টি গ্রামের মানুষ রতনকান্দি ও একডালা হাটে যাতায়াত করেন।
স্থানীয়রা জানান, নদী ভাঙনের কারণে অনেক পরিবার নদীর পশ্চিম পাড়ে চলে গেছে। কিন্তু প্রতিদিন ঘাট পার হতে গিয়ে তাদের সময় ও শ্রম দুটোই নষ্ট হচ্ছে। বর্ষায় কচুরিপানার চাপে সাঁকো ভেসে গেলে নৌকা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। অশীতিপর বৃদ্ধ চান আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, “দেশে অনেক উন্নয়ন হইছে, কিন্তু আমাগো এই ঘাটে একটা ব্রিজ হইলো না। মরার আগে একটা পাকা ব্রিজ দেইখা যাই।”
ধুনটের খাটিয়ামারী গ্রামের কৃষক কিরণ জানান, বর্ষায় ফসল ও মালামাল নিয়ে নদী পারাপারে ঝুঁকি নিতে হয়। এতে অনেক সময় দুর্ঘটনাও ঘটেছে। তিনি বলেন, “একটা পাকা ব্রিজ হলে আমাদের দুর্ভোগ অনেক কমে যেত।”
একডালার মুরব্বি রহিম ও রৌফ মিয়া জানান, নদীর পশ্চিমের চরে বর্তমানে দুই শতাধিক পরিবার বসবাস করছে। সেখানে স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসাও গড়ে উঠেছে। কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হতে হচ্ছে। তারা বলেন, “একটি স্থায়ী ব্রিজ এখন অত্যন্ত জরুরি।”
সিরাজগঞ্জের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউর রহমান জানান, “বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। শিগগিরই এলাকাটির সমীক্ষা চালানো হবে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে দ্রুত একটি ঢালাই ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।”
স্থানীয় বাসিন্দারা দীর্ঘদিনের এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে ইছামতি নদীর উপর একটি স্থায়ী ব্রিজ নির্মাণের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ কামনা করছেন।
Comments