ময়মনসিংহে বরাক নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলন রোধে ৩৯ বিজিবির অভিযান

ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী বরাক নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলন প্রতিরোধে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে ময়মনসিংহ ব্যাটালিয়ন (৩৯ বিজিবি)। সীমান্ত সুরক্ষা, চোরাচালান প্রতিরোধ ও অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধের পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে এই অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুর ১২টায় ব্যাটালিয়নের শহীদ মুশতাক মাহমুদ মাল্টিপারপাস সেড সংলগ্ন ব্রহ্মপুত্র নদীর পাড়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী হাসান।
তিনি বলেন, ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী এলাকায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও কুচক্রী মহল ইজারা বহির্ভূত স্থান থেকে ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ বালু উত্তোলন করছে। এর ফলে নদীভাঙন, কৃষিজমি বিলীন, সীমান্ত পিলার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এবং আন্তর্জাতিক সীমারেখা পরিবর্তনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
অধিনায়ক আরও জানান, ইজারাদারদের একাংশ অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগসাজশ করে বরাক ঘোষগাঁও মৌজার বাইরে দুমনিকুড়া এলাকায় রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। স্থানীয় প্রশাসন ও বিজিবির যৌথ টাস্কফোর্স অভিযান অব্যাহত থাকলেও এ কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না।
প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, গত ১ জুলাই থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত সময়কালে ৩৯ বিজিবি ৮টি অভিযান পরিচালনা করে ২৭,৩৩০ ঘনফুট বালু জব্দ করেছে। তবে ইজারাদারদের পৃষ্ঠপোষকতায় বৈধতার আড়ালে অবৈধ বালু উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে, যা সীমান্তবর্তী এলাকায় ভূমির প্রকৃতি পরিবর্তন এবং সীমান্ত পিলারগুলোর জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী হাসান জানান, অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে সীমান্ত রোডের কাঁচা রাস্তা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে স্থানীয় জনগণ, শিক্ষার্থী ও রোগীদের চলাচলে চরম দুর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া বালু পরিবহনের আড়ালে মাদক ও চোরাই পণ্য পাচারের আশঙ্কাও রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ময়মনসিংহ ব্যাটালিয়ন (৩৯ বিজিবি) হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া ও শেরপুরের বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশে ২৪/৭ ঘণ্টা নিষ্ঠার সঙ্গে সীমান্ত প্রহরার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। প্রতিটি বিওপি গড়ে ৫ থেকে ৮ কিলোমিটার সীমান্তবর্তী এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে।
এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসনকে লিখিত ও মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে এবং কয়েকটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:
১) বালুমহাল এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ স্থায়ী পোস্ট স্থাপন। ২) টাস্কফোর্স অভিযান জোরদার করা। ৩) বালুমহালের সীমানা মজবুত খুঁটি ও পতাকা দিয়ে স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা। ৪) অনিয়মে ইজারাদারের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হলে ইজারা বাতিল করা।
পরিশেষে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী হাসান বলেন, “বিজিবি সর্বোচ্চ আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করছে যেন বরাক নদীতে ইজারা বহির্ভূত এলাকায় কেউ অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করতে না পারে। সীমান্তের অখণ্ডতা রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ, গণমাধ্যম ও সাধারণ জনগণের সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
Comments