রাতে তেল ঢেলে কার্পেটিং
পাইকগাছায় ৭০ লাখ টাকার রাস্তা নির্মাণে দুর্নীতির গন্ধ
পাইকগাছা পৌরসভার শিববাটি এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প–২ (IUIDP-2) এর অধীনে বায়তুর জামে মসজিদ থেকে টিটিসি কলেজ (অস্থায়ী আর্মি ক্যাম্প) পর্যন্ত প্রায় ৭০০ মিটার সড়ক সংস্কারের কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। আনুমানিক ৭০ লাখ টাকার অধিক বাজেটের এই প্রকল্পে রাতে গোপনে বিটুমিন ঢেলে কার্পেটিংয়ের প্রস্তুতি নেওয়ায় স্থানীয়দের ক্ষোভের মুখে কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) রাতের আঁধারে কার্পেটিংয়ের প্রস্তুতি নিতে গেলে এলাকাবাসী বাধা দেয়। তাদের অভিযোগ নিম্নমানের ইট-খোয়া দিয়ে ভিত্তি কাজ শেষ করার পর এখন রাতকে ঢাল বানিয়ে দ্রুত কার্পেটিংয়ের চেষ্টা চলছে। আলো নেই, ব্যারিকেড নেই, তদারকি নেই সবকিছুই নিয়মবহির্ভূত।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দিনের বেলায় করলে অনিয়ম ধরা পড়ে যাবে ভেবেই রাতের অন্ধকারে তেল ঢালা হচ্ছে। প্রতিদিন হাজারো মানুষ এই সড়ক দিয়ে চলাচল করে, আর এমন নিম্নমানের কাজ করলে ছয় মাসও রাস্তাটি টিকবে না।
স্থানীয় বাসিন্দা মহিবুল্লাহ বলেন, ‘এর আগেও এই রাস্তায় দুই নাম্বার খোয়া দিয়ে কাজ হয়েছিল। ইউএনও দেখে গেছেন, পত্র-পত্রিকায় নিউজও হয়েছে। কিন্তু কোনো ফল হয়নি। আজ সন্ধ্যার আগে কোথাও বিটুমিন ছিল না, অন্ধকার নামতেই কাজ শুরু।’
আরেক বাসিন্দা তানভীর হোসেন বলেন, ‘নিম্নমানের ইট দিয়ে নিচের কাজ করেছে, এখন রাতে বিটুমিন ঢালছে। কোথাও পড়ছে, কোথাও পড়ছে না। অথচ কোনো কর্মকর্তাই নেই।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাতে কাজ করতে হলে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকা বাধ্যতামূলক যেমন পর্যাপ্ত আলোকসজ্জা, ব্যারিকেড, সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ও তদারকি প্রকৌশলীর উপস্থিতি। কিন্তু পাইকগাছার ৯নং ওয়ার্ডের শিববাটিতে এসবের কিছুই ছিল না। অন্ধকারে শ্রমিকের কাজ করা, দুই পাশে সতর্কীকরণ সাইনের অনুপস্থিতি সব মিলিয়ে প্রশ্ন উঠছে কাজের মান নিয়ে।
স্থানীয়দের দাবি, পাইকগাছায় বেশ কিছু রাস্তা নির্মাণের পর কয়েক মাস না যেতেই উঠে গেছে। তাই এবারও রাতের আঁধারে কাজ দেখে তারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় জানান `রাতে চুরি হয়, এখন রাস্তা নির্মাণও হচ্ছে রাতে এটা কিসের উন্নয়ন।’
জনগণের প্রশ্ন তদারকি বিভাগ কোথায়? মানুষ জানতে চাইছে, রাতে কাজের অনুমতি কে দিল? মান যাচাইকারী প্রকৌশলী ছিলেন কোথায়? বিটুমিনের গ্রেড পরীক্ষা হয়েছে কি? নিম্নমানের ইট–খোয়ার অভিযোগ যাচাই হলো না কেন? ঠিকাদার দিনের আলো এড়িয়ে চলছে কেন?
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি বাবুরাম বলেন, ‘পৌরসভার কর্মকর্তাদের অনুমতি নিয়েই কাজ হচ্ছে। তাদের উপস্থিতিতেই কাজ শুরু হয়েছে।’
নির্বাহী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) নুর আহমদ বলেন, ‘আমাদের লোকজন ছিল। এলাকা ব্যস্ত বিধায় রাতে কাজ করা হচ্ছে। বিষয়টি আমার জানা আছে। কাজ বিকালেও করা হয়েছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহেরা নাজনীন বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। রাতে কাজের কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। কেন এমন কাজ করা হলো তার জবাব দিতে হবে। তদন্তের পরই কাজ শুরু করা হবে।’
এলাকাবাসীর দাবি- রাতের গোপন কাজ বন্ধ, দিনের আলোয় স্বচ্ছভাবে কাজ, দায়িত্বহীনদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা, তদন্ত কমিটি গঠন, মান যাচাইয়ের রিপোর্ট প্রকাশ।
মানুষের একটাই প্রশ্ন উন্নয়ন আমাদের অধিকার কিন্তু উন্নয়নের নামে প্রহসন কেন?




Comments