Image description

রাত নামলেই আতঙ্ক বাড়ে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার কৃষকদের। অন্ধকার ঘনীভূত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই লাউয়াছড়া বনের ভেতর থেকে দলে দলে নেমে আসে বুনো শূকর। হানা দেয় ফসলি জমিতে। নিমেষেই তছনছ করে দেয় কৃষকের স্বপ্নের পাকা ধান ও শীতকালীন সবজিখেত। হাড়কাঁপানো শীত উপেক্ষা করে ফসল বাঁচাতে এখন নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে উপজেলার কয়েক গ্রামের কৃষকদের।

সরেজমিনে জানা যায়, গত এক মাস ধরে উপজেলার সদর ইউনিয়নের লংগুরপার, দক্ষিণ বালিগাঁও, বাঘমারা, সরইবাড়ি, ভেড়াছড়া ও ছাতকছড়া এলাকায় বুনো শূকরের উৎপাত বেড়েছে। আমন ধান ঘরে তোলার এই সময়ে শূকরের দল ধান, আলু, মুলা এমনকি কলাগাছসহ বিভিন্ন ফসল নষ্ট করছে। ক্ষতি এড়াতে কৃষকরা দলবদ্ধভাবে বাঁশ, টিনের ড্রাম ও লাঠিসোঁটা নিয়ে সারারাত জমি পাহারা দিচ্ছেন।

কৃষক মফিজ মিয়া বলেন, ‘শূকর আমাদের সব ফসল নষ্ট করে ফেলছে। এ অবস্থায় প্লাস্টিক ও টিনের ড্রামের শব্দ করে রাত জেগে ফসল পাহারা দিতে হয়। এসব শূকর মানুষকেও আক্রমণ করে। এ কারণে ৬ ফুট উঁচুতে বাঁশের মাচা তৈরি করেছি, যাতে বন্য শূকর আক্রমণ করতে না পারে।’

মফিজ মিয়ার মতো এভাবে মাচা তৈরি করে রাতভর পাহারা দিচ্ছেন কৃষক কনাই মিয়া, আবুল মিয়া ও আশিক মিয়া। ফসল কাটার আগ পর্যন্ত চলবে তাঁদের পাহারা দেওয়ার কাজ। তবে বুনো শূকরের আক্রমণ ঠেকাতে এখন পর্যন্ত সরকার কোনো উদ্যোগ নেয়নি বলে দাবি করেন কৃষকেরা।

মাধবপুর এলাকার আরেক কৃষক সুফি মিয়া বলেন, ‘১০ থেকে ১৫টি শূকর একসঙ্গে দল বেঁধে নামে। স্থানীয় ভাষায় এগুলোকে ‘বনোরতা’ বলা হয়। সন্ধ্যা নামলে একবার আসে, আবার মাঝরাতে হানা দেয়। টর্চ লাইট জ্বেলে আর চিৎকার করে ওদের তাড়াতে হয়। একটু অসতর্ক হলেই সব ধান নষ্ট করে দেয়।’

পরিবেশবাদী সংগঠন ‘জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটি’ কমলগঞ্জের সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. সালাহউদ্দিন শুভ বলেন, ‘বন উজাড় ও বনভূমি বেদখল হওয়ার কারণে বন্যপ্রাণীদের খাদ্য ও আবাসস্থল সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে তারা খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে হানা দিচ্ছে। লাউয়াছড়ার বেদখল হওয়া বনভূমি উদ্ধার করে বনায়ন করা হলে এই সংকট কমবে।’

এ বিষয়ে মৌলভীবাজার বন্যপ্রাণী রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক জামিল মোহাম্মদ খান বলেন, ‘লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে বুনো শূকরের বংশবিস্তার আগের তুলনায় বেড়েছে। খাবারের সন্ধানে এরা লোকালয়ে আসছে। কৃষকদের ফসলের ক্ষতি হওয়াটা দুঃখজনক। তবে বন্যপ্রাণী হত্যা দণ্ডনীয় অপরাধ। তাই কেউ যেন ফাঁদ পেতে বা অন্য কোনো উপায়ে বন্যপ্রাণী হত্যা না করেন, সে বিষয়ে সতর্ক করা হচ্ছে।’