রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে সরকার নিযুক্ত বিসিআইসি সার ডিলারদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত দামে সার বিক্রি ও রশিদ না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে ক্ষুব্ধ কৃষক ও খুচরা বিক্রেতারা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন।
সরেজমিনে জানা গেছে, সরকারের নির্ধারিত মূল্যে ডিএপি সারের দাম কৃষক পর্যায়ে প্রতি কেজি ২১ টাকা, অর্থাৎ প্রতি ৫০ কেজির বস্তা ১,০৫০ টাকা। কিন্তু স্থানীয় বিসিআইসি ডিলাররা খুচরা বিক্রেতাদের কাছে প্রতি বস্তা ১,৩৫০ থেকে ১,৫০০ টাকায় বিক্রি করছেন, ফলে তারা প্রতিটি বস্তায় ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত মুনাফা করছেন।
অভিযোগ রয়েছে, ডিএপি সার খুচরা বিক্রেতা ও সাব-ডিলারদের মধ্যে সমবণ্টন না করে, ডিলাররা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে থাকা সার শুধু পছন্দের কয়েকজন বিক্রেতার কাছে উচ্চ মূল্যে বিক্রি করছেন। এমনকি যাদের বৈধ সাব-ডিলার লাইসেন্স নেই, তাদের কাছেও সার বিক্রির অভিযোগ উঠেছে।
দৌলতদিয়া ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. ইমরান হোসেন বলেন, ‘বিসিআইসি ডিলারদের এসব অনিয়মের প্রতিবাদ করায় তারা আমার বিরুদ্ধে ১০ হাজার টাকা উৎকোচ দাবির মিথ্যা অভিযোগ দেয়। কোনো তদন্ত ছাড়াই আমাকে এখান থেকে বদলি করে দেওয়া হয়।’
অন্যদিকে, কৃষকদের অভিযোগ দেবগ্রাম ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. সোহেল শেখের বিরুদ্ধেও একাধিক অনিয়মের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কৃষি বিভাগ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
এ বিষয়ে স্থানীয় কৃষক মুসা শেখ, মুসলেম সওদাগর ও আক্কাস শেখ জানান, ‘সরকার নির্ধারিত দামে ডিএপি সারের বস্তা ১,০৫০ টাকা হলেও আমাদের কিনতে হয় ১,৫০০ থেকে ১,৬০০ টাকায়। এতে প্রতি বস্তায় ৪০০-৫০০ টাকা বেশি গুনতে হয়।’
গোয়ালন্দ উপজেলার সাব-ডিলার মো. জিয়া সরদার, সারজাহান শেখ ও জীবন কুমার ঘোষ স্বীকার করে বলেন, ‘আমরা ডিলারদের কাছ থেকে বেশি দামে সার কিনতে বাধ্য হই। তারা কোনো রশিদ দেন না, রশিদ চাইলে বলেন ‘রশিদ নিলে পরে সার দেওয়া হবে না।’ তাই বাধ্য হয়ে কৃষকদের কাছে প্রতি বস্তায় মাত্র ৫০ টাকা লাভ রেখে বিক্রি করি।’
গোয়ালন্দ উপজেলার বিসিআইসি ডিলাররা হলেন- খন্দকার ফারুক হোসেন, নুরুজ্জামান মিয়া, মো. হোসনে জামান, রনজিৎ কুমার সরকার, হোসেন আলী বেপারী, পলাশ কুমার সাহা ও মো. নুরুল হক মোল্লা।
নিয়ম অনুযায়ী, তাঁদের গুদাম নিজ নিজ ইউনিয়নে থাকার কথা থাকলেও সব ডিলারের গুদাম ও দোকান গোয়ালন্দ বাজারে অবস্থিত। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, উপজেলা কৃষি অফিসের প্রভাব কাজে লাগিয়ে তারা দীর্ঘদিন ধরে এইভাবে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন, ফলে ইউনিয়ন পর্যায়ের কৃষকরা অতিরিক্ত খরচ ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
এ বিষয়ে রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ডিডি) ড. মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বিসিআইসি ডিলারদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
কৃষকরা বলেন, অতিরিক্ত দামে সার বিক্রি ও বিক্রয় রশিদ না দেওয়ার এই অনিয়ম বন্ধ না হলে কৃষি উৎপাদন ব্যয় বাড়বে এবং সরকার নির্ধারিত সহায়তা ব্যবস্থাও ব্যাহত হবে। তারা দ্রুত কঠোর প্রশাসনিক নজরদারি ও স্বচ্ছ সার বিতরণ ব্যবস্থা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন।




Comments