Image description

আসন্ন রমজান মাস উপলক্ষ্যে তাজা ফল সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে ফল আমদানির ওপর আরোপিত অতিরিক্ত সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। নিত্যপণ্য বিবেচনায় সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) এ বিষয়ে একটি চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি।

বেনাপোল বন্দর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর এই বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৮০ ট্রাক বিভিন্ন ধরনের ফল আমদানি হতো। কিন্তু ফলের ওপর সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করায় বর্তমানে আমদানির পরিমাণ কমে দৈনিক ২০ থেকে ২২ ট্রাকে এসে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে রাজস্ব খাতেও বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

আগে যেখানে প্রতিদিন এই বন্দর দিয়ে শুধুমাত্র ফল আমদানি থেকেই ২৫ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হতো, বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫ কোটিতে। স্থানীয় আমদানিকারকরা জানান, ফল আমদানিতে শুল্ক কমানো না হলে বাজারে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। বর্তমানে ফলের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে রয়েছে। আমদানি করা তাজা ফল ‘বিলাসী পণ্য’ নয়, বরং ‘অত্যাবশ্যকীয় পণ্য’। তাই এর শুল্ক কমিয়ে মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে সরকারের জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

ব্যবসায়ীরা আরও জানান, ২০২৪ সালের ৯ জানুয়ারি ফলকে ‘বিলাসী পণ্য’ বিবেচনা করে এর ওপর সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়। এর কারণে স্থলবন্দরগুলো দিয়ে আপেল আমদানি প্রায় ৫২ শতাংশ, মাল্টা ৭১ শতাংশ ও আঙুর আমদানি ২৯ শতাংশ কমেছে।

বর্তমানে সবমিলিয়ে ফল আমদানিতে মোট শুল্কভার দাঁড়িয়েছে ১৩৬ দশমিক ২০ শতাংশে। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চিঠিতে বলা হয়, দেশের চাহিদার বড় অংশ আমদানি করা তাজা ফলের মাধ্যমে পূরণ হয়। গত কয়েক বছরে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও শুল্ক বৃদ্ধিসহ নানা কারণে আমদানি করা ফলের দাম বেড়ে গেছে। বর্তমানে আপেল, কমলা, আঙুর ও নাশপাতি আমদানিতে মোট শুল্ক রয়েছে ১২১ দশমিক ৭৮ শতাংশ। আর আনার আমদানিতে মোট শুল্ক-কর রয়েছে ১২৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ। অথচ ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট শুল্ক-করের পরিমাণ ছিল ৮৯ দশমিক ৩২ শতাংশ।

চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, আপেল, মাল্টা, আনার ইত্যাদি ফলের স্থানীয় উৎপাদন নেই। তাই এসব ফলে উচ্চহারে শুল্ক-কর রাখার প্রয়োজনীয়তা সীমিত। অন্যদিকে উচ্চহারে শুল্ক আরোপের ফলে বৈধ পথে আমদানি কমে তা অবৈধ পথে আমদানিকে উৎসাহিত করতে পারে। এ ছাড়া ব্যবসায়ীদের মধ্যে অতিমাত্রায় বিভিন্ন রাসায়নিক ব্যবহারের প্রবণতাও বাড়তে পারে। উচ্চ শুল্ক হারের ফলে তাজা ফলের আমদানি কমার ধারা অব্যাহত থাকলে শুধু ভোক্তা সাধারণের স্বার্থই ক্ষুণ্ন হবে না, ভবিষ্যতে রাজস্ব আহরণও কমে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

ফল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছর সরকার হঠাৎ করে ফল আমদানিতে অতিরিক্ত শুল্কারোপ করায় বাজারে এর প্রভাব পড়ে এবং ফলের দাম বেড়ে যায়। রমজান মাসে ফলের দাম আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অতিরিক্ত সম্পূরক শুল্ক নির্ধারণ করার পর ফল আমদানি কমে গেছে। বাজারে আমদানিকৃত ফলের সরবরাহ কমে যাওয়ায় ফলের দামও বেড়েছে, যা এখন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে।

বেনাপোল আমদানি ও রপ্তানিকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান বলেন, ‘গত বছরের ৯ জানুয়ারি আমদানি করা তাজা ফলের ওপর সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করে সরকার। ফলে স্থানীয় বাজারে ফলের দাম বৃদ্ধি পায় এবং বাড়তি শুল্কের কারণে আমদানিকারকেরা ফল আমদানিতে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েন। একই সঙ্গে বেনাপোল বন্দর বড় অঙ্কের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বর্তমান বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন আসন্ন রমজান মাস উপলক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) এ বিষয়ে চিঠি দিয়েছে। আমরা আশা করছি, দ্রুত এর সমাধান হবে এবং বেনাপোলসহ দেশের সকল স্থলবন্দর দিয়ে আবারও আগের মতো ফল আমদানি শুরু হলে স্থানীয় পর্যায়ে ফলের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে চলে আসবে।’

ফল ব্যবসায়ী সোহাগ জানান, তাজা ফলকে ‘বিলাসী পণ্য’ হিসেবে বিবেচনা করে এর ওপর ৩০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করে সরকার। গত বছর আমদানির ক্ষেত্রে মূলত ডলার সংকট উত্তরণের পথ হিসেবে ফল আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়েছিল। বর্তমানে দেশের ব্যাংকগুলোতে ডলার সংকট নেই। তাই ‘নিত্যপণ্য আইন-১৯৫৬’ অনুযায়ী খাদ্যপণ্য হিসেবে তাজা ফল ‘অত্যাবশ্যকীয় পণ্য’ বিধায় এর ওপর আরোপিত অতিরিক্ত সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করা হোক।