Image description

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) উদ্যোগে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ১১০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম (টিআইসি) মিলনায়তনে এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট, সনদ ও সম্মানীর অর্থ তুলে দেন।

এর আগে দিনের শুরুতে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন নগরীর ডিসি পার্কের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, “বীর মুক্তিযোদ্ধারাই জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়েই আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল একটি স্বপ্ন নিয়ে তা হলো সাম্য, ন্যায়বিচার, মানবিক মর্যাদা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা। মুক্তিযোদ্ধারা কখনো ভাতা বা ব্যক্তিগত প্রাপ্তির আশায় জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেননি। তাদের লক্ষ্য ছিল কেবল দেশকে স্বাধীন করা।”

স্বাধীনতার সাড়ে পাঁচ দশক পেরিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “স্বাধীনতার পর আমরা কী অর্জন করেছি আর কী পারিনি তা এখন আত্মসমালোচনার বিষয়। যেখানে ঘাটতি রয়েছে, সেখানেই আমাদের কাজ করতে হবে। কেবল আনুষ্ঠানিকতা নয়, একটি ন্যায়ভিত্তিক ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়াই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত।”

মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে চসিক মেয়র বলেন, “দেশে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সঠিক তালিকা প্রণয়ন করা অত্যন্ত জরুরি। সেই তালিকায় নাম, পরিচয়ের পাশাপাশি পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা থাকা দরকার। বর্তমানে অনেক ক্ষেত্রে অনৈতিকভাবে মুক্তিযোদ্ধার পরিচয়দানকারীরা সামনে চলে আসছে, আর প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা আড়ালে হারিয়ে যাচ্ছেন। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করেছেন নিঃস্বার্থভাবে ও নীরবে।”

স্মৃতিচারণ করে ডা. শাহাদাত বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের সময় চন্দনাইশে আমাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ধানক্ষেতে লুকিয়ে আমরা প্রাণ বাঁচিয়েছিলাম। সেই বিভীষিকাময় স্মৃতি এখনো চোখে ভাসে। অতীতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির অপচেষ্টা হয়েছে এবং শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের অবদানকে খাটো করা হয়েছে। নতুন প্রজন্মের মাঝে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।”

চসিকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সচিব মো. আশরাফুল আমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ ও আলোচনা করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা একরামুল করিম, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক কমান্ডার শাহাবুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা সোহরাব হোসেন, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজল বারিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন, থিয়েটার ইনস্টিটিউটের পরিচালক অভীক ওসমান ও শহীদ আবুল মনসুরের ভাই ডা. রকিবুল্লাহ।

এ সময় সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন বিভাগীয় প্রধান, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।