Image description

কুষ্টিয়ার নবাগত পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন পিপিএম (বার) বলেছেন, “আমাদের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করা। আমরা যদি একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে কোনোভাবে হোঁচট খাই, তবে বাংলাদেশকে এক অনিশ্চিত গন্তব্যের পথে অগ্রসর হতে হবে। তাই দেশের স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই।”

শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে জেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সাথে আয়োজিত এক বিশেষ মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। প্রায় আড়াই ঘণ্টাব্যাপী এই সভায় আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও রাজনৈতিক দলগুলোর করণীয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

২৪-এর জুলাই বিপ্লব ও ৫ আগস্টের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে পুলিশ সুপার আরও বলেন, “যেকোনো বিপ্লব সফল করতে হলে বিপ্লবীদের মধ্যে ইস্পাতকঠিন ঐক্য থাকতে হয়। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, জুলাই বিপ্লবের পর আমাদের সেই কাঙ্ক্ষিত ঐক্যে কিছুটা ফাটল ধরেছে। যেকোনো মূল্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের পারস্পরিক ঐক্য ধরে রাখতে হবে, অন্যথায় দেশ গভীর সংকটে পড়বে।”

কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) শিকদার মো. হাসান ইমামের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত এ মতবিনিময় সভায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, এবি পার্টি, বাসদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।

সভায় কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কুতুব উদ্দিন আহমেদ বলেন, “সম্প্রতি ঢাকা ও কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যেসব সহিংস ঘটনা ঘটানো হচ্ছে, তা কোনোভাবেই দাবি আদায়ের ভাষা হতে পারে না। যারা এই ধরনের অস্থিতিশীলতা ও সহিংসতা সৃষ্টি করছে, তারা কখনোই শহীদ ওসমান হাদীর মতাদর্শের অনুসারী হতে পারে না।”

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর জেলা আমির মাওলানা আবুল হাশেম তার বক্তব্যে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “একটি বিশেষ চক্র বা অপশক্তি চাইছে না বাংলাদেশে কোনোভাবেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। নির্বাচন বানচাল করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তারা দেশে আরও বড় ধরনের সহিংসতা ঘটানোর পাঁয়তারা করতে পারে। এই আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে।”

কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সদস্য সচিব প্রকৌশলী হোসেন সরকার বলেন, “বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যর্থ হলে জুলাই বিপ্লবের পুরো অর্জনই ব্যর্থ হবে। আমরা যদি সরকারকে পূর্ণ সহযোগিতা না করি, তবে বিপ্লবের লক্ষ্য পূরণ হবে না। প্রতিবাদের ভাষা হওয়া উচিত নিয়মতান্ত্রিক। এখন যা হচ্ছে, তা যদি চলতে থাকে তবে জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে।”

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুষ্টিয়া জেলা শাখার আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে বুকে ধারণ করে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে দলমত নির্বিশেষে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। অনেক প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত এই বিপ্লবকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না।” একই মত পোষণ করে কুষ্টিয়া প্রেস ক্লাবের আহ্বায়ক আল মামুন সাগর বলেন, “রাজনীতিবিদদের অনৈক্যের কারণে আজ জুলাই বিপ্লব ব্যর্থ হতে বসেছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।”

মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) কুষ্টিয়া জেলা সভাপতি শফিকুর রহমান, ইসলামী আন্দোলনের জেলা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আহম্মদ আলী, কুষ্টিয়া প্রেস ক্লাবের সদস্য সচিব আবু মনি জুবায়ের রিপন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রতিনিধি আরিফুজ্জামান এবং এনসিপির যুগ্ম সমন্বয়কারী কে এম আর শাহীন।

এছাড়া সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন এনসিপির ভেড়ামারা উপজেলা শাখার সমন্বয়কারী বুলবুল আহমেদ, আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নেতা সুলতান মারুফ তালহা, এবি পার্টির কুষ্টিয়া জেলা শাখার আহ্বায়ক আবু বকর সিদ্দিক, বিজেপির যুগ্ম আহ্বায়ক ইমরুল কায়েস এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি মাসুম বিল্লাহসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।