দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে ভূমিহীন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য নির্মিত ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প-২’-এর চিত্র এখন অত্যন্ত করুণ। তদারকি ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে প্রকল্পের ৩০টি ঘরের মধ্যে ২৫টিই গত এক যুগ ধরে ফাঁকা পড়ে আছে। পরিত্যক্ত এসব ঘর এখন লতাগুল্মে ছেয়ে গেছে এবং অনেক ক্ষেত্রে মাদকসেবীদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে।
সরেজমিনে উপজেলার বেলওয়া আন্দিয়া পুকুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ২০০৪ সালে অসহায় ও ভূমিহীন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য তিনটি ব্যারাকে (৭, ৮ ও ৯ নম্বর) ৩০টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছিল। শুরুতে সব পরিবারকে ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হলেও বর্তমানে সেখানে বসবাস করছে মাত্র ৫টি পরিবার। বাকি ২৫টি পরিবার দীর্ঘ সময় ধরে এখানে থাকে না। পরিত্যক্ত ঘরগুলোর অধিকাংশেরই দরজা-জানালা নেই, কোনোটির টিন খুলে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। পুরো এলাকায় এখন এক ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ঘর বরাদ্দের ক্ষেত্রে অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি এবং প্রকৃত ভূমিহীনের বদলে স্বচ্ছল ব্যক্তিদের নামে ঘর বরাদ্দ দেওয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া কর্মসংস্থানের অভাব এবং পর্যাপ্ত নাগরিক সুবিধা না থাকায় বরাদ্দপ্রাপ্তরা ঘর ছেড়ে চলে গেছেন।
স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বলেন, “যাদের ঘর দেওয়া হয়েছিল, তাদের অনেকেরই নিজস্ব ভালো বাড়ি ছিল। তারা মনে করেছিল সরকারি ঘর থেকে আরও অনেক সুবিধা পাবে। কিন্তু কয়েক বছর পর যখন দেখল এখানে শুধু ঘর ছাড়া আর কিছু নেই, তখন তারা আবার নিজেদের বাড়িতে ফিরে গেছে। বর্তমানে ২-৩টি অসহায় পরিবার কোনোমতে এখানে টিকে আছে।”
আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসরত ৮০ বছর বয়সী গেডা মার্ডি আক্ষেপ করে বলেন, “২০ বছর ধরে এখানে আছি। ৩০ ঘরের মধ্যে সব পালিয়ে গেছে। এখন আমার ঘরের টিনও নষ্ট হয়ে গেছে, বর্ষায় ভেতরে পানি পড়ে। আমাদের কষ্টের শেষ নেই।”
প্রকল্প ছেড়ে যাওয়া ‘ছোট মুরমু’ জানান, বাবার মৃত্যুর পর মাকে দেখাশোনা করতে তিনি পৈত্রিক ভিটায় ফিরে গেছেন এবং পরবর্তীতে অন্য প্রকল্পে নতুন ঘর পেয়েছেন।
এ বিষয়ে ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবানা তানজিম বলেন, “প্রকল্পের ঘরগুলো পরিত্যক্ত থাকার বিষয়টি আপনার মাধ্যমেই জানতে পারলাম। আমি এবং উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দ্রুত প্রকল্পটি পরিদর্শন করব। ঘরগুলো যাতে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য করা যায় এবং প্রকৃত ভূমিহীনরা সুবিধা পায়, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”




Comments