Image description

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় যান্ত্রিকীকরণ ও আধুনিক চাষাবাদের মাধ্যমে দেড়শ বিঘা জমিতে সমলয় পদ্ধতিতে বোরো ধানের চাষাবাদ শুরু হয়েছে। এই পদ্ধতির চাষাবাদে বীজতলা থেকে শুরু করে ধান মাড়াই পর্যন্ত যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হবে। ফলে কম খরচে অধিক ধান উৎপাদন করতে পারবেন কৃষক। 
জানা গেছে, প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে সমলয় পদ্ধতিতে প্রতিটি ধাপে খরচ অর্ধেক। প্রতি বিঘায় প্রচলিত চাষাবাদে হাইব্রিড ধানবীজ ৪ কেজি ও উফশী ধানবীজ ৮ কেজি দিয়ে বীজতলা তৈরি করতে হয়। সেখানে সমলয়ে চাষাবাদে বিঘাপ্রতি বীজ খরচ হয়েছে অর্ধেক। আবার উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, রাইস ট্রান্সপ্লান্টার দিয়ে ধানের চারা রোপণ করায় এ পদ্ধতিতে বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে ১ হাজার ২০০ টাকা। শ্রমিক দিয়ে ধান রোপণ করতে গেলে অন্তত ৬ হাজার টাকা খরচ হতো। এ ছাড়া উইডার মেশিন দিয়ে নিড়ানি দেওয়া হবে। এতে মাত্র ২ জন শ্রমিক প্রয়োজন হবে। এ ক্ষেত্রে অন্তত ১০ জন শ্রমিকের মজুরি সাশ্রয় হবে। এই ধান পাকার পর কম্বাইন্ড হারভেস্টার দিয়ে কেটে মাড়াই করে দেওয়া হবে। এই মেশিন দিয়ে ১ বিঘা জমির ধান কাটতে মাত্র ১ হাজার ৫০০ টাকা ব্যয় হবে। এতে সাশ্রয় হবে অন্তত সাড়ে ৭ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে এই পদ্ধতির চাষাবাদে কৃষকের বিঘাপ্রতি সাশ্রয় হবে অন্তত ১২ হাজার টাকা। এ ছাড়া এই পদ্ধতির চাষাবাদে বিঘাপ্রতি হাইব্রিডে ৩০ মণের স্থলে ৩৫ মণ ধান উৎপাদিত হবে। উফশী জাতে ২৫ মণের স্থলে ৩০ মণ ধান উৎপাদিত হবে। এই পদ্ধতির চাষাবাদে জমিতে কোনো আইল থাকে না। এ ছাড়া ২০-২২ দিন বয়সের ধানের চারা রোপণ করতে হয়। তাই ধানের উৎপাদন বেড়ে যায়।
রামচন্দ্রপুর গ্রামের কৃষক মো. নাজিম বলেন, এই পদ্ধতিতে চাষাবাদে বীজতলা তৈরিতে অর্ধেক বীজ লেগেছে। এতে বীজ খরচ সাশ্রয় হয়েছে। আজ রাইস ট্রান্সপ্লান্টার দিয়ে ১ বিঘা জমির ধান আবাদ করেছি। এই চাষাবাদে খরচ সাশ্রয় হচ্ছে। ভালো ফলন পেলে অধিক লাভবান হব বলে আশা করছি।
একই গ্রামের কৃষক মহিব শেখ বলেন, নতুন পদ্ধতির চাষাবাদে সবই যন্ত্রের ব্যবহার। এখানে শ্রমিক তেমন লাগে না। ধান কাটার সময় শ্রমিক সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। তখন শ্রমিককে ১ হাজার টাকা মজুরি দিতে হয়। ধান নিয়ে আমাদের দুশ্চিন্তার শেষ থাকে না। এই চাষাবাদে অধিক ফলন পেয়ে দ্রুত ধান ঘরে তুলতে পারব। এতে আমাদের অধিক লাভ হবে।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জামাল উদ্দিন বলেন, সমলয়ে চাষাবাদে রামচন্দ্রপুর গ্রামের ৪৮ জন কৃষককে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। চাষাবাদের শুরুতে আমরা ট্রেতে বীজতলা করেছি। উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে ৮ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হচ্ছে। এর মধ্যে আইল রয়েছে প্রায় ১২৬ হেক্টর। জমির আইল অনাবাদি থাকে। সব জমিতে সমলয়ে চাষাবাদ হলে ওই জমি চাষাবাদের আওতায় আসত। এতে আরও ৭৫৬ মেট্রিকটন ধান বেশি উৎপাদন হতো। এই চাষাবাদ ছড়িয়ে দিতে পারলে দেশ খাদ্য উৎপাদনে আরও সমৃদ্ধ হবে বলে ওই কৃষি কর্মকর্তা মন্তব্য করেন।
গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণের উপপরিচালক ড. অরবিন্দ কুমার রায় বলেন, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় সমলয়ে চাষাবাদ কার্যক্রমের আওতায় ১৫০ বিঘা জমিতে চাষাবাদ শুরু হয়েছে। এই পদ্ধতির চাষাবাদে একই জাতের ফসল আবাদ করতে হয়। ম্যানেজমেন্ট ও সেচ-নিকাশ খুব সহজ। এই পদ্ধতির চাষাবাদ সম্প্রসারিত হলে দেশের খাদ্য উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।