Image description

কক্সবাজারের সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের উপকূলীয় পাহাড়ি এলাকায় টানা ৫ ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে সংঘবদ্ধ মানবপাচারকারী চক্রের ১২ সদস্যকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এ সময় পাচারের জন্য আটকে রাখা ১১ জনকেও উদ্ধার করা হয়।

টেকনাফস্থ ২ বিজিবির বিশেষ আভিযানিক দল মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত বাহারছড়া ইউনিয়নের কচ্ছপিয়া পাহাড়, টেকনাফ পৌরসভার দক্ষিণ জালিয়াপাড়াসহ বিভিন্ন স্থানে এই অভিযান চালায়। ২ বিজিবি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আশিকুর রহমান এই অভিযানে নেতৃত্ব দেন।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আশিকুর রহমান নিজেই বুধবার রাতে গণমাধ্যমকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এই অভিযানে মানবপাচারকারীদের মধ্যে আছেন টেকনাফের তুলাতলী এলাকার মো. আব্দুর রশিদ (৩৫), লেঙ্গুরবিল এলাকার মো. মিজানুর রহমান (২০), উখিয়ার থাইংখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মো. আবু তৈয়ব (২৫), মিয়ানমারের বুচিডং এলাকার মো. ইদ্রিস (৩৫), টেকনাফের তুলাতলী এলাকার জাহেদ (১৮), টেকনাফের দক্ষিণ জালিয়াপাড়া এলাকার মো. জুবায়ের (৩৩), টেকনাফ কচ্ছপিয়া এলাকার নরুল আবছার (১৮), ছোট হাবিবপাড়ার মো. ইসমাইল (৩২), বড় ডেইল এলাকার মো. ইমরান (২৮), কচ্ছপিয়া এলাকার নুর মোহাম্মদ (৪০), টেকনাফের জাদিমুরা এলাকার মাহমুদউল্লাহ (৩০) ও টেকনাফের কচ্ছপিয়া এলাকার খুরশিদা বেগম (৩৪)।

বিজিবি দাবি করছে, এই পাচার চক্রের মূল হোতা টেকনাফ সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ লম্বরী এলাকার সাইফুল ইসলাম (৪০), টেকনাফ সদরের বড়ইতলি এলাকার নেজাম উদ্দিন ও বাহারছড়ার কচ্ছপিয়া এলাকার মো. হোসেন (৩১)।

বিজিবি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আশিকুর রহমান জানান, কয়েক মাস ধরে মেরিন ড্রাইভ ও তার আশপাশের পাহাড়ি এলাকায় মানবপাচারের তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছিল।

এ কারণে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। বিজিবির দীর্ঘদিনের গোয়েন্দা নজরদারি ও গোপন তথ্যের ভিত্তিতে এই বিশেষ অভিযান চালানো হয়েছে।

বিজিবি বলছে, গত জুলাইয়ে ১৫ জন, আগস্টে ৪ জন ও সেপ্টেম্বরে এখন পর্যন্ত ১৭ জন পাচারকারীকে আটক করেছে বিজিবি। গত ১৪ সেপ্টেম্বর শাহপরীর দ্বীপের মোহনায় ১০০ মিয়ানমারের নাগরিককে পাচারের চেষ্টা ব্যর্থ করে ৪ পাচারকারীকেও আটক করা হয়েছিল।

বিজিবির তদন্ত সূত্রমতে, টেকনাফ এলাকায় হোসেন, সাইফুল এবং নেজামের নেতৃত্বে একটি বিশাল পাচারকারী নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। মাঠপর্যায়ের সদস্যরা প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের নাগরিকদের মালয়েশিয়া পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেয়। 

ভুক্তভোগীদের তথ্যমতে, মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত মূল হোতাদের কাছে পাঠানোর জন্য স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে ভুক্তভোগীদের দুর্গম এলাকায় এনে রাখা হয়। পরে সেখানে তাদের মোবাইল ফোন, নগদ অর্থ ছিনিয়ে নেয়া হয় এবং খাদ্য সংকটে রাখা হয়। পরে তাদের ছোট নৌযানে গভীর সমুদ্রে পাঠানো হয়।

তাদের মতে, আর্থিকভাবে সচ্ছল ভুক্তভোগীদের জিম্মি রেখে পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করা হয়। এই চক্রের সঙ্গে মাদক পাচার, চোরাচালান, অপহরণ ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক অপরাধেরও যোগসূত্র রয়েছে।

বিজিবি অধিনায়ক আশিক জানান, সীমান্তে মানবতা ও জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় মাদক, চোরাচালান ও মানব পাচারের বিরুদ্ধে বিজিবির জিরো টলারেন্স নীতি কঠোরভাবে কার্যকর থাকবে।

আটক পাচারকারীদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে মামলা রুজু করে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। উদ্ধারকৃত ভুক্তভোগীদের আত্মীয়স্বজনের জিম্মায় ফিরিয়ে দেয়ার কার্যক্রমও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বিজিবির অভিযানে ৬২ জন পাচারকারীকে আটক করা হয়েছে। তবে এখনও ২৪ জন পলাতক রয়েছে। বিজিবি জানিয়েছে, পলাতকদের ধরতে অভিযান অব্যাহত থাকবে।