Image description

গাজীপুর মহানগরীর পূবাইল থানা এলাকার কুখ্যাত ত্রাস, ভূমিদস্যু ও একাধিক অপরাধে অভিযুক্ত আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক আহবায়ক বশির আহমেদকে (৪৫) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুর ৩টা ১০ মিনিটে পূবাইল মেট্রো থানা পুলিশ হায়দরাবাদ পুবেরটেক এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। বশির পূবাইল মেট্রো থানা এলাকার ৩৯ নং ওয়ার্ডের জোনাব আলীর ছেলে।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারে, বশির হায়দরাবাদে চিহ্নিত দেহ ব্যবসায়ী শ্যামলীর বাসায় অবস্থান করছেন। অভিযানে তার বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শ্যামলীর সঙ্গে বশিরের বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক এলাকায় ‘ওপেন সিক্রেট’ ছিল।

বশির আহমেদের বিরুদ্ধে পূবাইল এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাস, ভূমিদস্যুতা, হত্যা, হামলা ও চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:

জমি দখল ও চাঁদাবাজি: অবৈধভাবে অন্যের জমি জবরদখল, চাঁদা আদায় এবং চাহিদা অনুযায়ী টাকা না দিলে ঘরবাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ।

হামলা ও হত্যাকাণ্ড: গাজীপুরে হাসনাত আবদুল্লাহসহ এনসিপি নেতাদের ওপর হামলা এবং সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেলের বাড়িতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ। এছাড়া যুবলীগ নেতা মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডসহ একাধিক হত্যাকাণ্ডে তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।

স্বৈরশাসকের সমর্থন: ফ্যাসিস্ট আমলে ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঠেকাতে বলপ্রয়োগ ও ভাঙচুরের অভিযোগ। প্রশাসনের লোকজনকে ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

মামলা তুলে নিতে চাপ: বশিরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হলেও ভুক্তভোগীদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে মামলা তুলে নিতে বাধ্য করার অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামলে বশির গাজীপুর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের প্রশ্রয়ে পূবাইলে সন্ত্রাস ও অপরাধের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। তিনি এলাকায় ‘গডফাদার’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। চাঁদাবাজি, লুটপাট, জমি দখল, হামলা এবং ভাড়ায় অন্যের জমি দখল করে দেওয়া তার নিয়মিত কার্যক্রম ছিল। ভুক্তভোগীরা তার ভয়ে মামলা করার সাহস পেতেন না। এমনকি হাসিনা পালানোর পরও বশির ও তার সহযোগীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন এবং স্থানীয় বিএনপির একটি অংশকে ম্যানেজ করে প্রকাশ্যে এলাকায় ঘুরে বেড়াতেন।

বশিরের গ্রেফতারের খবরে পূবাইল এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল জলিল বলেন, “বশির জমি দখল করে, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছে। তার ভাই মোহাম্মদ আলী ইটালি ও ভাগিনারা হায়দরাবাদসহ পূবাইলে সন্ত্রাস ও জমি দখল করত। আমরা বহুদিন ধরে তার বিচার চাইছিলাম, কিন্তু পাইনি।”

গৃহবধূ রহিমা খাতুন বলেন, “দিনে হায়দরাবাদে গ্লাস ফ্যাক্টরির ভেতর অফিস বসিয়ে অপরাধীদের নিয়ে আড্ডা দিতো, রাতে গাজীপুর সদরে গিয়ে লুকিয়ে থাকত। তার অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলাম।”

ভুক্তভোগী ইমদাদুল হক বলেন, “বশির শুধু চাঁদাবাজিই করেনি, আমাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে প্রশাসনের যোগসাজশে নির্যাতন চালিয়েছে। আমরা বাড়িতে ঘুমাতে পারিনি, এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলাম।”

পূবাইল মেট্রো থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আমিরুল ইসলাম বলেন, “গ্রেফতার বশির আহমেদের বিরুদ্ধে থানায় হামলা-ভাঙচুরসহ একাধিক মামলা রয়েছে। তাকে আইনি প্রক্রিয়া শেষে আদালতে পাঠানো হবে।”