সংঘবদ্ধ ধর্ষণে মা হলেন বুদ্ধি প্রতিবন্ধী নারী, দোষীদের বিচারের দাবি

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলায় ধর্ষণের শিকার হয়ে মা হয়েছেন এক বুদ্ধি প্রতিবন্ধী নারী। তবে সন্তানের বাবা হিসেবে কেউ স্বীকৃতি দিচ্ছে না। এ ঘটনায় উপজেলা জুড়ে এক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
গত ২৯ আগস্ট (শুক্রবার) বিকেলে উপজেলার পাঙ্গাসী ইউনিয়নের দেউলমুরা উত্তর পাড়া গ্রামের নিজ বাড়িতে কন্যা সন্তানের জন্ম দেন ওই নারী। তার বাবা মারা গেছেন অনেক আগেই। মা বেঁচে থাকলেও তিনিও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী।
স্থানীয় সূত্র জানায়, এক বছর আগে স্বামীর সংসার ত্যাগ করে নিজ বাড়িতে অবস্থান করছিলেন ওই ভুক্তভোগী নারী। এর কিছুদিন পর থেকেই তার শারীরিক পরিবর্তন লক্ষ্য করেন এলাকাবাসী।
ভুক্তভোগী নারী অভিযোগ করে জানান, স্বামীর সংসার ছেড়ে আসার পর পাঙ্গাসী ইউনিয়নের দেউলমুরা উত্তরপাড়া গ্রামের তিন ব্যক্তির দ্বারা বিভিন্ন সময় ধর্ষণের শিকার হয়ে নিজ বাড়িতে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন।
ঘটনার বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়ে আরও জানান, ওই এলাকার মৃত কুদু শেখের ছেলে মো. সাগর (৫৫), মৃত আবু সাইদের ছেলে মো. হাফিজ ওরফে হাফী (৪০), এবং মৃত জুড়ান আলীর ছেলে মো. ইসমাইল (৪৫) তাদের জরাজীর্ণ বাড়ির পাশে নিয়মিত জুয়া খেলার পাশাপাশি নেশা করত। তাকে বিভিন্নভাবে ভয় দেখিয়ে ওই তিন ব্যক্তি বিভিন্ন সময় জোরপূর্বক ধর্ষণ করত। এ ঘটনা কাউকে জানালে তাকে হত্যার হুমকি দিত অভিযুক্তরা। তবে এই তিন জনের মধ্যে তিনি সন্তানের বাবা হিসেবে অভিযুক্ত সাগর (৫৫)-কে নিশ্চিত করেন।
এ ঘটনার পর স্থানীয় গ্রাম প্রধানরা একাধিক বৈঠকের মাধ্যমে সমঝোতার চেষ্টা করলেও কোনো সমাধান হয়নি।এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে বলে জানান তারা।
গ্রামের একাধিক বাসিন্দা জানান, অভিযুক্তদের সবাই চিহ্নিত হলেও এখনও পর্যন্ত কোনো শাস্তি হয়নি। তারা বলেন, সমাজের সবাই ন্যায়বিচারের পক্ষে, বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে বিচারের দাবি জানাই।
দেউলমুরা উত্তর পাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও সমাজসেবক মো. আব্দুল আলিম জানান, এ ঘটনায় আমরা মোটামুটি অপরাধীদের শনাক্ত করতে পেরেছি। ওই মেয়ের স্বামীকে অবগত করা হয়েছে, ২–৩ দিনের মধ্যে সমাধানের চেষ্টা করব। তবে সমাজের সবাই এ ঘটনায় ন্যায়বিচারের পক্ষে বলে জানান তিনি। এ ঘটনায় স্বামী পরিত্যক্ত ওই নারীর মায়ের নিকট জানতে চাইলে তিনিও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হওয়ায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত ওই তিন ব্যক্তির বাড়িতে একাধিকবার গিয়েও তাদের বা তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।
এ ঘটনায় সচেতন মহলে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। তারা অভিযুক্তদের পাশাপাশি শিশুটির ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে পিতার পরিচয় শনাক্ত ও দোষীদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।
পাঙ্গাসী ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক আনন্দ বর্মণ জানান, এ বিষয়ে আমি অবগত নাই। খোঁজ নিয়ে বিষয়টি দেখবো। তবে অভিযুক্তসহ ওই শিশুটির ডিএনএ টেষ্টের মাধ্যমে পিতার পরিচয় এবং অপরাধীদের শনাক্ত করা যাবে বলে জানান।
জানতে চাইলে রায়গঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কেএম মাসুদ রানা বলেন, এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মেডিকেল রিপোর্ট ও তদন্ত সাপেক্ষে খুব শীগ্রই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Comments