কংক্রিটের নগরে প্রতিনিয়ত কমছে সবুজের বিস্তার। ধুলোবালি, যানজট আর দূষণের ভিড়ে প্রকৃতির স্বাদ যেন হারিয়ে যাচ্ছে। তবে এরই মধ্যে শহরের অনেক সচেতন মানুষ খুঁজে পেয়েছেন বিকল্প সমাধান, বারান্দা ও ছাদ বাগান। সীমিত জায়গায় সৃজনশীল উদ্যোগে গড়ে উঠছে ক্ষুদ্র সবুজ অরণ্য, যা একইসঙ্গে দৃষ্টিনন্দন, স্বাস্থ্যকর ও পরিবেশবান্ধব।
নগরে এমন সবুজ উদ্যোগের বিষয়ে কথা হয় গাজীপুর মহানগরীর উত্তর বিলাসপুর আবাসিক এলাকার বাসিন্দা আব্দুল্লাহ আলিউল আজিমের সাথে তিনি জানান, তিন বছর ধরে তার বাড়ির ছাদে বিভিন্ন ফুল ও শাকসবজি চাষ করছেন। বাগান পরিচর্যা নিয়ে বলেন, ছাদের গাছগুলো আমার প্রতিদিনের মানসিক প্রশান্তি। সকালে পানি দিতে গেলে মনটা সতেজ হয়ে যায়। শুধু সৌন্দর্য নয়, কিছু শাকসবজি ফলাতে পারি। এতে পরিবারও নিরাপদ খাবার পাচ্ছে।
নগরীর পূবাইলের বাসিন্দা সৈয়দা হামিদা আক্তারও তার বারান্দার গাছপালাকে জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ করে তুলেছেন। তার ছোট্ট বারান্দায় ফুটে থাকে জবা, অপরাজিতা, কাঠবাদাম, নয়নতারা, গোলাপসহ নানান প্রজাতির গাছ। তিনি জানান, এই গাছগুলো আমার বারান্দাকে শুধু সবুজ-শোভায় ভরিয়ে তুলেনি, বরং প্রতিদিনের ক্লান্তি দূর করে দিয়েছে। প্রকৃতির এই ছোঁয়া ছাড়া আমার দিনই যেন অসম্পূর্ণ লাগে।
উপকারিতা ও সম্ভাবনা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বারান্দা ও ছাদ বাগান শুধু নান্দনিকতার জন্য নয়, এর রয়েছে বহুমুখী সুবিধা—
পরিবেশগত সুবিধা:
গাছ বাতাস থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণ করে অক্সিজেন ছড়ায়, শহরের দূষণ কমায়।
তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ:
ছাদে গাছ থাকলে ভবনের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত হয়, বিদ্যুতের খরচও কমে।
খাদ্য নিরাপত্তা:
বারান্দায় সহজেই চাষ করা যায় লেটুস, ধনেপাতা, মরিচ, পুদিনা, লাউসহ নানা শাকসবজি।
অর্থনৈতিক সাশ্রয়:
বাজার নির্ভরতা কমে গিয়ে খরচ বাঁচে।
মানসিক প্রশান্তি:
সবুজে সময় কাটানো মানসিক চাপ ও ক্লান্তি দূর করে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, নগর কৃষি প্রকল্পের আওতায় ছাদ ও বারান্দা বাগানকারীদের প্রশিক্ষণ, চারা, সার ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। তাদের মতে, প্রতিটি ভবনের ছাদ সবুজায়ন করা গেলে নগর জীবনের পরিবেশগত সংকট অনেকটা লাঘব করা সম্ভব।
বারান্দা বা ছাদ বাগান এখন আর কেবল শখ নয়; এটি হয়ে উঠছে নগর জীবনের অপরিহার্য অংশ। সীমিত জায়গা, অল্প শ্রম ও যত্ন দিয়েই সম্ভব গড়ে তোলা একটি নিরাপদ ও সবুজ আশ্রয়। এই ক্ষুদ্র উদ্যোগগুলো একদিন বৃহৎ নগর সবুজায়নে রূপ নিতে পারে—যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য রেখে যাবে শ্বাস নেওয়ার মতো একটি সুস্থ পরিবেশ।




Comments