অবৈধ থ্রি হুইলারের দখলে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়ক, বাড়ছে দুর্ঘটনা ও জনদুর্ভোগ

ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার চান্দাইকোনা এলাকা এখন কার্যত অবৈধ থ্রি হুইলার যানবাহনের দখলে। নছিমন, করিমন, ভটভটিসহ বিভিন্ন তিন চাকার যানবাহন মহাসড়কে দাপটের সঙ্গে চলাচল করছে, যার অনেকগুলো উল্টোপথে চলে এবং যত্রতত্র দাঁড়িয়ে থাকে। এর ফলে তীব্র যানজট ও প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে।
চান্দাইকোনার পশুরহাট উত্তরবঙ্গের অন্যতম বৃহৎ হাট। প্রতি শনিবার ও মঙ্গলবার এই হাটে প্রায় অর্ধ লক্ষ পশুর ক্রয়-বিক্রয় হয়, যার লেনদেনের পরিমাণ আনুমানিক ৫০ কোটি টাকা। হাটে আসা শত শত পশুবাহী গাড়ি, বিশেষ করে নছিমন, করিমন ও ভটভটি, পার্কিংয়ের নির্দিষ্ট জায়গার অভাবে মহাসড়কেই সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকে। এসব যানবাহন মহাসড়কের দুই পাশ দখল করে রাখায় স্বাভাবিক চলাচলে ব্যাঘাত ঘটছে। হাটে পশু ওঠা-নামার কাজও মহাসড়কের ওপরে হওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে।
মহাসড়কে চলাচলকারী পথচারী ও চালকরা দীর্ঘদিন ধরে এ সমস্যায় ভুগছেন। গাবতলী থেকে আসা বাসচালক আল আমিন হোসেন বলেন, “চান্দাইকোনায় এসে মহাসড়ক প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। অবৈধ যানবাহনের জন্য দুই দিকের গাড়ি চলাচল করতে পারে না, ফলে তীব্র যানজট হয়।” বগুড়া থেকে ঢাকাগামী ট্রাকচালক মিঠু মিয়া বলেন, “হাটের পাশে সারিবদ্ধভাবে গাড়ি পার্ক করা থাকায় যানজট হয়। ক্রেতা-বিক্রেতারা ঝুঁকি নিয়ে রোড ডিভাইডার টপকে মহাসড়ক পার হন, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ায়।”
পথচারী আশরাফ আলী বলেন, “রাস্তা পার হওয়া যায় না। গাড়ির ফাঁক খুঁজে চলতে হয়। দুর্ঘটনা ঘটতে এক মুহূর্তই যথেষ্ট!” স্থানীয় বাসিন্দা সোহাগ হোসাইন জানান, “নছিমন ও অটোরিকশার সংঘর্ষে প্রায়ই আহতের ঘটনা ঘটছে, কিন্তু প্রশাসনের কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই।”
নির্ধারিত পার্কিং ব্যবস্থার অভাব এ সমস্যার মূল কারণ। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, বছরের পর বছর ধরে এ সমস্যা চললেও প্রশাসন কোনো দৃশ্যমান সমাধানে আসেনি। সচেতন নাগরিকরা বলছেন, অবিলম্বে পার্কিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং অবৈধ যানবাহনের চলাচল বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।
হাট কমিটির সভাপতি মো. সামছুল হক খান বলেন, “পার্কিংয়ের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা আছে, কিন্তু বেশি গাড়ি হলে অনেক চালক নির্দেশনা না মেনে মহাসড়কে পার্কিং করেন। আমরা চেষ্টা করছি এগুলো নিয়ন্ত্রণে আনতে।”
হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ওসি মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, “বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। হাট কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির বলেন, “অবৈধ পার্কিংয়ের বিষয়ে হাট কমিটি ও হাট উন্নয়ন বিষয়ক মিটিংয়ে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ অনুযায়ী, মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ। তবে এই আইন অমান্য করেই চলছে অবৈধ থ্রি হুইলার। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, প্রশাসনের যোগসাজশেই এসব যানবাহন মহাসড়কে দাপটের সঙ্গে চলছে।
সচেতন নাগরিকরা অবিলম্বে নির্ধারিত পার্কিং ব্যবস্থা, কঠোর আইন প্রয়োগ এবং মহাসড়কে অবৈধ যানবাহনের চলাচল বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। অন্যথায় মানুষের জীবন ও নিরাপত্তা আরও বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
Comments