Image description

আলু উৎপাদনে খ্যাত জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার কৃষক এবছর আলুর দাম না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন। আলুর বাজার দর এতটাই কমে গেছে যে ৪ বস্তা আলু বিক্রি করে একজন কৃষক মাত্র ১ কেজি গরুর গোশত কিনতে পেরেছেন। কৃষকদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, তাদের উৎপাদন খরচ তুলতে না পারায় আগামী মৌসুমে অনেকেই আলু চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন। 

কালাই উপজেলার কৃষক ইসমাইল বলেন, “আমরা অনেক কষ্ট করে আলু চাষ করি। সার, কীটনাশক, সেচ—সবকিছুর খরচ দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু বাজারে দাম পাচ্ছি না। ৪ বস্তা আলু বিক্রি করে ১ কেজি গোশত কিনতে পারলাম—এটা কি আমাদের পরিশ্রমের ন্যায্য মূল্য?”

আব্দুল মতিন নামের আরেক কৃষক বলেন, “এই অবস্থায় আগামী মৌসুমে আলু চাষ করব কি না ভেবে পাচ্ছি না। অনেক কৃষকই চাষ থেকে সরে যাওয়ার কথা ভাবছেন।”

স্থানীয় হিমাগার গুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে প্রতি বস্তা আলুর দাম ৫৩০ থেকে ৫৫০ টাকার মধ্যে। এ টাকার মধ্যে হিমাগার ভারা দিতে হচ্ছে ৩৭০ টাকা এতে ৪ বস্তা আলু বিক্রি করে মিলছে ১ কেজি গরুর গোশত দাম। ফলে আলু বিক্রি করে পরিবার চালানো তো দূরের কথা, নিজেদের নিত্যপ্রয়োজনীয় চাহিদাও মেটাতে পারছেন না কৃষকেরা। কৃষক প্রতি বছর হিমাগারে যে আলু সংরক্ষণ করেন তা বিক্রি করে পরবর্তী বছরে জমিতে আলু রোপণ করে। চলতি বছর কৃষক চরম লোকশানে পড়ায় তাদের এ স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারছেনা। ফলে তারা কম খরচে চাষাবাদে বিকল্প ভাবছেন। 

স্থানীয় কৃষক সমাজ সরকারের কাছে আলুসহ সকল কৃষি পূন্যর ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা এবং কৃষকদের জন্য বিশেষ সহায়তা প্রদানের দাবি জানিয়েছেন। তা না হলে কৃষকরা আগাম মৌসুমে চাষাবাদ থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হবেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, উপজেলার ১৩ টি হিমাগারে এ বছর মৌসুমের শুরুতে  আলু সংরক্ষণে ছিলো ১ লক্ষ ২৯ হাজার ২৬৩ মেঃটন। যা গত বছরের তুলুনায় ১৭ হাজার ৪৫০ মেঃটন বেশি। আজ সোমবার পর্যন্ত ওইসব হিমাগারে আলু মজুদ আছে ৬৬ হাজার ৭৮৫ মেঃটন। গত বছর এ সময়ে হিমাগার গুলোতে আলু মজুদ ছিলো ৩৫ হাজার ৫শ' ৯৫ মেঃটন। অপরদিকে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত মজুদ আছে ৬৬ হাজার ৭শ' ৮৫ মেঃটন আলু। যা অর্ধেকেরও বেশি । 

আলু ব্যবসায়ী রুবেল, রাহেল, ছামছুল ও ইব্রাহিমসহ কয়েকজন ব্যবসায়ীর সাথে কথা বললে তারা জানান, গত সেশনে আলু উৎপাদন বাড়ায় হিমাগার গুলোতেও বেশি পরিমাণ আলু মুজদ হয়েছে। আমরা চাহিদা মাফিক উপজেলার বাহিরে আলু সরবরাহ করে থাকি। এতে ধারণা হচ্ছে হিমাগারে এখনো যে পরিমাণ আলু মজুদ আছে তাতে সব আলু বের না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এবছর কৃষকরা প্রতি কেজি আলু বিক্রি করছেন উৎপাদন খরচের চেয়েও অনেক কম দামে, যা তাদের জন্য বড় ধরনের আর্থিক ধাক্কা হয়ে এসেছে। তারা আলু চাষ কমিয়ে দিলে, সামগ্রিক কৃষি উৎপাদনে প্রভাব ফেলতে পারে। এ নিয়ে আমরা সকলেই দুশ্চিন্তায় আছি। 

কালাই উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ হারুনুর রশিদ বলেন, “চাষিরা যদি উৎপাদন খরচের ন্যায্য মূল্য না পায়, তাহলে তারা আলু চাষে নিরুৎসাহিত হবে। আমরা কৃষকদের উৎসাহিত করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছি, তবে বাজারে দাম না থাকলে কৃষকদের আগ্রহ ধরে রাখা কঠিন।”

তিনি আরও জানান, সরকারি পর্যায়ে আলুর সংরক্ষণ ও বিপণনে কার্যকর পদক্ষেপ নিলে কৃষকরা ন্যায্য দাম পাবেন এবং আগামী মৌসুমে আলু চাষেও আগ্রহ বাড়বে।