Image description

নীলফামারীর সৈয়দপুরে শীতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে জমে উঠেছে মৌসুমি পিঠার দোকানগুলো। শহরের বিভিন্ন মোড় থেকে গ্রামের হাট-বাজার পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে এসব পিঠার দোকান, যেখানে ভাপা, চিতই, পুলি, পাটিসাপটা ও দুধচিতইসহ হরেক রকমের পিঠা তৈরি ও বিক্রি হচ্ছে। সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত ক্রেতাদের ভিড়ে সরগরম থাকে এসব দোকান।

সৈয়দপুরের ক্যান্টনমেন্ট সিএসডি মোড়, বড় ও ছোট রেলঘুন্টি, শহীদ ডা. জিকরুল হক সড়ক, কলিম মোড়, হানিফ মোড়, গেট বাজার, গোলাহাট ও ঢেলাপীর বাজারসহ প্রায় প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় মৌসুমি পিঠার দোকানগুলো শোভা পাচ্ছে। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন বয়স ও পেশার মানুষ এসব দোকানে ভিড় করছেন। বিশেষ করে ভাপা ও চিতই পিঠার চাহিদা সবচেয়ে বেশি।

ছোট রেলঘুন্টির পিঠা বিক্রেতা শাহনাজ পারভীন জানান, ভাপা ও চিতই পিঠা প্রতিপিস ১০ টাকা, পাটিসাপটা ও দুধচিতই ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সব খরচ বাদ দিয়ে তিনি প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা লাভ করেন। একইভাবে, ক্যান্ট বাজারের পিঠা বিক্রেতা শিউলী ও রাবেয়া জানান, শীতের মৌসুমে পিঠার দোকান থেকে তাঁদের সংসারের খরচ মেটানো সম্ভব হয়। তাঁরা বলেন, “এখনো পুরোদমে শীত শুরু না হলেও রাতে শীতের আমেজ অনুভূত হচ্ছে। তাই আগেভাগে দোকান বসিয়েছি। শীত থাকা পর্যন্ত বেচাকেনা বেশ ভালো হয়।”

পিঠা খেতে আসা সহিদুল, আব্দুর রহিম, রিয়া মনি ও মাহমুদ জানান, সন্ধ্যার পর সময় পেলেই তারা পিঠার দোকানে আসেন। খেজুরের গুড় ও বিভিন্ন ভর্তার সঙ্গে পিঠার স্বাদ তাদের মুগ্ধ করে। ক্রেতা রাব্বি বলেন, “ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলোর পিঠার মান ও স্বাদ বেশ ভালো। তাই এখান থেকে পিঠা কিনি।”

ছোট রেলঘুন্টির আরেক বিক্রেতা রফিক জানান, বর্তমানে চিতই পিঠার চাহিদা বেশি। প্রতিটি চিতই পিঠা ১০ টাকা, কুলি পিঠা ১০ টাকা এবং পাটিসাপটা ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, চালের দাম বাড়লেও পিঠার দাম আগের মতোই রাখা হয়েছে।

শহরের বিভিন্ন পিঠার দোকান ঘুরে দেখা গেছে, সন্ধ্যা হলেই ক্রেতাদের ভিড় বাড়ে, যা রাত ১২টা পর্যন্ত চলে। রিকশাচালক, দিনমজুর, শিশু-কিশোর, চাকরিজীবী, শিক্ষার্থী— সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এসব দোকানে ভিড় করছেন। অনেকে কর্মস্থল থেকে ফেরার পথে পিঠা কিনে নিয়ে যান। ব্যস্ত নগরজীবনে বাসায় পিঠা তৈরির সময় না থাকায় শীতের হিমেল সন্ধ্যায় খোলা আকাশের নিচে পিঠার স্বাদ নিতে ভিড় করছেন অনেকে।

সৈয়দপুরের প্রবীণ সাংবাদিক আমিরুজ্জামান বলেন, “পিঠা বাংলার ঐতিহ্যবাহী খাবার। শীত এলেই অলিগলিতে পিঠার দোকান বসে। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডার ফাঁকে পিঠা খাওয়ার মজাই আলাদা।” তিনি জানান, পিঠার দোকানে একসঙ্গে পিঠা উৎসবে মেতে ওঠা তাদের জন্য আনন্দের।

শীতের আগমনে সৈয়দপুরে পিঠার এই মৌসুমি দোকানগুলো শুধু খাবারের চাহিদাই মেটাচ্ছে না, বরং স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে ধরে রাখছে।