Image description

মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার ঢাকা–ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের পাশে প্রায় ১১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ট্রমা সেন্টারটি এখন পরিণত হয়েছে পরিত্যক্ত ভবনে। ২০২২ সালে উদ্বোধন হলেও তিন বছর পেরিয়ে গেছে, এখনও চালু হয়নি এ গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা কেন্দ্রটি। জনবল সংকটের অজুহাতে স্বাস্থ্য বিভাগ দায় এড়াচ্ছে।

এদিকে রাতে ট্রমা সেন্টারের ভেতরে চলে মাদকসেবীদের আড্ডা, আর ফাঁকা ভবনজুড়ে বিরাজ করছে ভূতুড়ে পরিবেশ। সরকারি কোটি টাকার এই প্রকল্প এখন হয়ে উঠেছে অব্যবস্থাপনার এক জ্বলন্ত উদাহরণ।

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর থেকেই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ দ্রুত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করছেন। কিন্তু দ্রুতগতির কারণে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা—নিহত ও আহত হচ্ছেন অসংখ্য মানুষ।

শিবচর হাইওয়ে পুলিশের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের মার্চ থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এক বছরে এ এক্সপ্রেসওয়েতে ১৩৫টি দুর্ঘটনায় ১৩১ জন নিহত ও ১৭২ জন আহত হয়েছেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ট্রমা সেন্টারটি চালু না থাকায় আহতদের শিবচর বা ভাঙ্গা থেকে ঢাকা বা ফরিদপুরে নিতে সময় লাগে, ফলে অনেকেই পথেই মারা যান।

একজন স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল ছামাদ বলেন, ট্রমা সেন্টারটি চালু থাকলে আমরা এখানেই চিকিৎসা পেতাম। কিন্তু অবহেলায় কোটি টাকার ভবন এখন জঙ্গলে ঢাকা, সরকারি সম্পদ নষ্ট হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ট্রমা সেন্টারের প্রধান ফটক ভাঙা, নিরাপত্তাকর্মী নেই। দেয়াল টপকে ভেতরে প্রবেশ করে বহিরাগতরা মাদক সেবন করছে। ভবনের ফ্যান, বাতি, বৈদ্যুতিক তার, পানির কলসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম চুরি হয়ে গেছে। সাব-স্টেশনের কক্ষগুলো ভাঙচুরের শিকার। ভবনের চারপাশে জন্মেছে ঝোপঝাড়—রাতে পুরো এলাকা অন্ধকার ও নির্জন।

মাদারীপুর সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ট্রমা সেন্টারটিতে দুজন আবাসিক চিকিৎসকসহ ৩৪টি পদে জনবল নিয়োগের কথা, যার মধ্যে ১৪ জন চিকিৎসক, ১০ জন নার্স ও ফার্মাসিস্ট-টেকনিশিয়ান অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু এখন পর্যন্ত একটিও পদে কেউ যোগ দেননি।

দুর্ঘটনা ঘটলে আহতদের চিকিৎসা দেওয়ার কোনো জায়গা নেই। ট্রমা সেন্টারটি দ্রুত চালু হলে অনেক প্রাণ বাঁচানো সম্ভব।

মাদারীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শরীফুল আবেদীন কমল বলেন, জনবল সংকটের কারণে ট্রমা সেন্টারটি চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন ও জনবল পদায়ন হলেই সেন্টারটি চালু করা হবে।

অভিজ্ঞরা বলছেন, দুর্ঘটনার পরপরই দ্রুত চিকিৎসা পেলে অনেক প্রাণ বাঁচানো সম্ভব। সময়মতো চিকিৎসা না পেয়ে বহু আহত ব্যক্তি অঙ্গহানি বা স্থায়ী পঙ্গুত্বের শিকার হচ্ছেন। তারা ট্রমা সেন্টারটি অনতিবিলম্বে চালুর দাবি জানিয়েছেন।

শিবচর হাইওয়ে থানার ওসি মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, এক্সপ্রেসওয়ের দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসার জন্য ট্রমা সেন্টার থাকা জরুরি। চালু না থাকায় আমরা বিপাকে পড়ি।

১২ কোটি টাকার আধুনিক ট্রমা সেন্টার এখন কার্যত এক ‘অচল চিকিৎসাকেন্দ্র। সরকারের বিনিয়োগ যেমন অকার্যকর হয়ে পড়েছে, তেমনি সাধারণ মানুষের জীবনও ঝুঁকির মুখে।

জনস্বার্থে ট্রমা সেন্টারটি দ্রুত চালুর দাবি জানিয়েছেন শিবচরবাসী।