কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়েছেন চাকরিপ্রত্যাশী শিক্ষার্থীরা
নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস, ঘুষ বাণিজ্য ও দুর্নীতির অভিযোগে কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়েছেন চাকরিপ্রত্যাশী শিক্ষার্থী ও জনতা। এ সময় ফলাফল ঘোষণার প্রস্তুতিসহ নিয়োগ সংক্রান্ত কাজে কার্যালয়ের ভেতরেই অবস্থান করছিলেন সিভিল সার্জন শেখ মোহাম্মদ কামাল হোসেন। শনিবার (২৫ অক্টোবর) দুপুর ১টার দিকে শহরের এনএস রোডে অবস্থিত ওই কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন বিক্ষুব্ধরা। তাদের দাবি, শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত বিতর্কিত নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করে অবিলম্বে পুনরায় পরীক্ষা গ্রহণ করতে হবে।
শুক্রবার কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সাতটি পদের ১১৫টি শূন্য পদে নিয়োগ পরীক্ষার পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১৬ হাজার ৭৮৯ জন। এর মধ্যে ৫০ ভাগের কিছু বেশি পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু পরীক্ষার আগেই রাত থেকেই কুষ্টিয়া শহরের একটি বাসায় ২৫ থেকে ৩০ জন শিক্ষার্থীর রহস্যজনক প্রবেশ ও পরীক্ষার আগমুহূর্তে বের হওয়ার দৃশ্যে বিতর্কের জন্ম দেয়। গুঞ্জন শুরু হয় তাদের একত্রে নিয়ে পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের উত্তর মুখস্থ করানো হয়েছে। বিতর্কের পালে আরও হাওয়া লাগে, যখন আলোচনায় আসে চাকরিপ্রার্থীরা যে বাসা থেকে বের হয়েছেন, সেটি ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা. হোসেন ইমামের।
কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ২৬ অক্টোবর এই ত্রুটিপূর্ণ নিয়োগ পরীক্ষার বিরুদ্ধে কর্মসূচি ঘোষণা করা ছিল। কিন্তু জানতে পারলাম দুর্নীতির অভিযোগের মধ্যেই আজকে তড়িঘড়ি করে ফলাফল ঘোষণা করা হবে। এ জন্য তাৎক্ষণিক এই কর্মসূচি ঘোষণা করতে হয়েছে। তিনি বলেন, আজকের মধ্যেই ওই নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল ও নতুন পরীক্ষার ঘোষণা দিতে হবে। সেই সঙ্গে যারা এই ঘটনায় জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। আর সেটা না করা হলে কালকে পুরো কুষ্টিয়া অচল করে দেওয়া হবে।
এদিকে নিয়োগের লিখিত পরীক্ষার দিন একটি বাসা থেকে ২৫ থেকে ৩০ জন শিক্ষার্থীর বের হওয়ার ভিডিও ভাইরাল হওয়া প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর চিঠি দিয়েছেন কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডা. শেখ মোহাম্মদ কামাল হোসেন। চিঠিতে বলা হয়, ২৪ অক্টোবর কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন কার্যালয় এবং এর নিয়ন্ত্রণাধীন বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে ১১-২০ গ্রেডের ১১৫টি শূন্য পদে জনবল নিয়োগের লক্ষ্যে লিখিত পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। বিদ্যমান নিয়োগ বিধির আলোকে নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণপূর্বক যথাযথভাবে সার্বিক নিরাপত্তা বজায় রেখে অত্যন্ত সুষ্ঠু পরিবেশে কুষ্টিয়া শহরের ১৪টি কেন্দ্রে লিখিত পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়। পরীক্ষা চলাকালীন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও ক্লিপে কুষ্টিয়া শহরের একটি বাড়ি থেকে কয়েকজন ব্যক্তিকে বের হতে দেখা যায়। ভিডিওতে উল্লেখ করা হয়, বাড়িটি কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. হোসেন ইমামের। ভিডিও ক্লিপটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হওয়ায় নিয়োগ কার্যক্রম সম্পর্কে জনমনে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে আরএমও ডা. মোহাম্মদ হোসেন ইমাম বলেন, ভোররাতের ঘটনায় আমি কিছুই জানি না। আমার পৈতৃক বাড়িতে শুধু আমি না, আমি, আমার ভাই ছাড়াও তিনটি ফ্লোরে মেস রয়েছে। পরীক্ষার্থীরা ওই মেসেই এসেছিল। তারা বলেছেন, সিভিল সার্জন অফিসের পরীক্ষায় অংশ নিতে এসেছেন। গণমাধ্যম কর্মীদের দেখে তারা কেন পালিয়েছে, সেটাও আমার অজানা।
কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডা. শেখ মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসারের বাসা থেকে পরীক্ষার্থীদের বের হয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ায় আমরা লিখিতভাবে মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বিষয়টি জানিয়েছি। এ বিষয়ে তারাই পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।




Comments