Image description

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলায় সরকারি জমি বন্দোবস্ত নিয়ে স্থাপনা নির্মাণের ফলে বন্ধ হয়ে গেছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একমাত্র চলাচলের পথ। দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে এই সংকট নিরসন না হওয়ায় বাধ্য হয়ে এখন সড়কের পাশে গাছতলায় পাঠদান করাচ্ছেন শিক্ষকরা। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে উপজেলার পূর্ব চর পাত্রখাতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থী।

মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়ে প্রবেশের পথ বন্ধ থাকায় শিক্ষকরা সড়কের পাশে গাছতলায় শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছেন। যে পথ দিয়ে একসময় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করতেন, সেখানে এখন বসতি স্থাপন করা হয়েছে।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৮ সালে স্থানীয় শিক্ষানুরাগীদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়ে বর্তমানে ৬ জন শিক্ষক এবং ১০৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি সরকারি করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিদ্যালয়ে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম ছিল ওয়াবদা খালের বাঁধ।

স্থানীয়রা জানান, বিদ্যালয়ের জমিদাতা সাবেক ইউপি সদস্য সেকেন্দার আলী ৩৫ শতাংশ জমি দান করেন। স্কুলে যাওয়ার পথটি ছিল ৩১৩৫ ও ৩১৩৬ দাগের জমির ওপর দিয়ে যাওয়া ওয়াবদা খালের বাঁধ। এর মধ্যে ৩১৩৬ দাগটি সরকারি খাসজমি। ২০১৬ সালের দিকে পাত্রখাতা মাস্টার হাটের জাহাঙ্গীর আলম নিজেকে ভূমিহীন দেখিয়ে ৩১৩৬ দাগের ১৫ শতাংশ ও ৩১৩৭ দাগের ২১ শতাংশ জমি বন্দোবস্ত নেন।

সম্প্রতি এলজিইডি সেখানে নতুন একটি ব্রিজ নির্মাণ করে। এরপরই জাহাঙ্গীর আলম এলজিইডির পুরোনো ব্রিজের সংযোগস্থলে মাটি ভরাট করে স্থাপনা তৈরি করেন, ফলে বিদ্যালয়ের একমাত্র রাস্তাটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। অভিযোগ রয়েছে, জাহাঙ্গীর আলম তার শ্যালক (কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার ইউএনও) মো. মাইদুল ইসলামের প্রভাব খাটিয়ে বন্দোবস্তকৃত জমির বাইরেও (৩১৩৫ দাগ) দখল করে বসতি গড়ে তুলেছেন।

৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমাইয়া ও সুম্মা জানায়, ‘রাস্তা না থাকায় অন্যের বাড়ির ভেতর দিয়ে স্কুলে আসতে হয়। পথে বড় গর্ত আছে, যা বর্ষাকালে পানিতে ভরে যায়। ছোটরা ভয়ে স্কুলে আসতে চায় না।’

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছা. রিয়াদ বিন রানু বলেন, ‘স্বাভাবিক যাতায়াত পথ না থাকায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রতিদিনই কষ্ট করতে হচ্ছে। বিষয়টি প্রশাসনকে জানিয়েও কোনো সুরাহা না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে রাস্তায় পাঠদান করছি।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. মনসুর আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সরকারি জায়গা বন্দোবস্ত নিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানের পথ বন্ধ করা ধৃষ্টতার শামিল। স্কুলের রাস্তার বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে আমিও প্রতিহিংসার শিকার হয়েছি।’

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমি স্কুলের রাস্তা বন্ধ করিনি। রাস্তার জন্য সরকারি বরাদ্দ এলে প্রয়োজনে জায়গা ছেড়ে দেব।’

এ বিষয়ে চিলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সবুজ কুমার বসাক বলেন, ‘স্কুলের রাস্তার বিষয়ে তদন্তে লোক পাঠানো হয়েছিল। তারা সরেজমিন প্রতিবেদন দিয়েছে। দ্রুতই স্কুলের রাস্তা বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।’