নওগাঁয় চলতি মৌসুমে আমন ধান কাটা ও মাড়াই এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। জেলার প্রায় অর্ধেক জমির ধান কাটা বাকি থাকতেই বাজারে শুরু হয়েছে অস্থিরতা। সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে মণপ্রতি প্রায় ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা কমে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকেরা। এতে উৎপাদন খরচ তোলা নিয়েই দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন উপজেলার মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় ৫০ শতাংশ ধান কাটা ও মাড়াই বাকি। কৃষকরা বলছেন, মৌসুমের কাজ পুরোপুরি শেষ হতে আরও ১০-১৫ দিন সময় লাগবে। এরই মধ্যে বাজারে ধানের দরপতন তাদের হতাশ করেছে।
সরকার চলতি মৌসুমে প্রতি কেজি ধানের দাম ৩৬ টাকা অর্থাৎ প্রতি মণ ১ হাজার ৪৪০ টাকা নির্ধারণ করেছে। অথচ স্থানীয় নিয়ামতপুরের ছাতড়াহাট, মহাদেবপুরের মাতাজি এবং মান্দার চৌবাড়িহাট ও সতীহাটসহ বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা দরে।
মান্দা উপজেলার কৃষক আব্দুল লতিফ (৫২) আক্ষেপ করে বলেন, ‘এখনো অনেক জমির ধান কাটা বাকি। সার ও শ্রমিকের দাম অনেক বেশি। কিন্তু বাজারে ধানের দাম শুনলেই বুক ভেঙে যায়। মণপ্রতি ১ হাজার ৫০ টাকায় ধান বিক্রি করলে লোকসান গোনা ছাড়া উপায় নেই।’
সরকারি ক্রয়কেন্দ্রে ধান বিক্রির জটিলতার কথা উল্লেখ করে মহাদেবপুরের কৃষক মোসলেম উদ্দিন (৪৮) বলেন, ‘সরকারি দরে খুব অল্প পরিমাণ ধান কেনা হয়। ক্রয়কেন্দ্রে আমাদের ধান নেওয়া হয় না, নানা অজুহাত দেখানো হয়। বাধ্য হয়ে দালালদের কাছে কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। ধান কাটা পুরোপুরি শেষ হলে দাম আরও কমার আশঙ্কা করছি।’
পত্নীতলার নারী কৃষক রোকসানা খাতুন বলেন, ‘শ্রমিকের মজুরি ও উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এর মধ্যে ধানের দাম কমতে থাকলে আমাদের পথে বসা ছাড়া উপায় থাকবে না। এ চিন্তায় দিন-রাত অস্থিরতায় কাটছে।’
এদিকে ধানের দাম কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা ব্যাংকের তারল্য সংকট ও মিল মালিকদের অনাগ্রহকে দায়ী করছেন।
নওগাঁ সদর বাজারের ধান ব্যবসায়ী হাসানুজ্জামান রনি বলেন, ‘ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন কঠিন হয়ে গেছে। মিলগুলোও ধান কম কিনছে। হাতে নগদ টাকা না থাকায় আমরা চাইলেও বেশি দামে ধান কিনতে পারছি না।’
মান্দা বাজারের ব্যবসায়ী মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, ‘বাজারে ধানের সরবরাহ বাড়লেও নগদ টাকার সংকটে দাম বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না।’
এ বিষয়ে নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোছা. হোমায়রা মন্ডল বলেন, ‘জেলায় এখনো প্রায় অর্ধেক ধান কাটা বাকি। ধান কাটার গতি বাড়ায় বাজারে সরবরাহও বাড়ছে। আমরা মাঠপর্যায়ে পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। কৃষকরা যাতে ন্যায্যমূল্য পান এবং সরকারি ক্রয়কেন্দ্রে ধান দিতে পারেন, সে বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
কৃষকদের অভিযোগ, ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত না হলে আগামী মৌসুমে ধান চাষে আগ্রহ হারাবেন তারা। তাই মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমিয়ে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।




Comments