Image description

চার সহস্রাধিক গ্রাহকের কোটি টাকা আত্মসাধের অভিযোগ উঠেছে স্বপ্নছোয়া সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ৩ গ্রাহক আদালতে মামলা করায় উল্টো তাদেরকে মামলা ও প্রাননাশের হুমকি দিচ্ছে সমিতির পরিচালক আরিফ খন্দকার।   

জানা গেছে, বরিশাল নগরীর সাহাপড়া এলাকার ফজলুল হকের ছেলে তানজিরুল ইসলাম তুষার তার শ্বশুর শেখ কমাল, শাশুড়ি জেছমিন বেগম ও তার বোন মুন্নি বেগম স্বপ্ন ছোঁয়া সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি সদস্য ছিলেন। তাদের চারটি হিসাব বইতে ৪ লাখ ৯২ হাজার ৩০ টাকা জমা হয়। এই টাকা গ্রাহকদের না দিয়ে আত্মসাত করে সমিতির পরিচালক আরিফ খন্দকার। 

তাদের পক্ষে তানজিরুল ইসলাম তুষার বরিশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামিরা হলেন—পলাশপুর এলাকার বাদশা খন্দকারের ছেলে আরিফ খন্দকার, তার স্ত্রী রিমা আক্তার, ভাই আবির খন্দকার এবং একই এলাকার মোহাম্মদ সালামের ছেলে সিয়াম।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, আসামি আরিফ খন্দকার “স্বপ্নছোয়া সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি”র মালিক পরিচয়ে দীর্ঘদিন ধরে গ্রাহকদের কাছ থেকে ডিপিএস ও দৈনিক সঞ্চয়ের নামে টাকা সংগ্রহ করে আসছিলেন। অন্যান্য আসামীরা ওই প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পদে কর্মরত ছিলেন। বাদী তুষারের শ্বশুর-শাশুড়ি ও আত্মীয়সহ তিনজন সাক্ষী সমিতিতে দীর্ঘ তিন বছরের বেশি সময় ধরে একাধিক ডিপিএস হিসাব চালু রাখেন।

ডিপিএস হিসাবগুলো অনুযায়ী মামলার ১নং সাক্ষী শেখ কামাল আলীর হিসাব নং ১২৫৯/৪০৮১—মোট জমা ১,৫৭,৮৪০ টাকা। ২নং সাক্ষী জেছমিন বগেমেট হিসাব নং ৩৫১৯—মোট জমা ২,৮৪,০৫০ টাকা। এছাড়া ৩নং সাক্ষী মুন্নী বেগমের হিসাব নং ৩৫১—মোট জমা ৪৯,৬৫০ টাকা সহ সর্বমোট জমাকৃত টাকা ৪,৯২,০৩০ টাকা ফাটিয়ে নেয়। ওই টাকা উত্তোলনের জন্য বারবার সমিতিতে গেলে আসামিরা নানা তালবাহানা করতে থাকে।

মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, গত ১ জুলাই রাত ৮টার দিকে সাক্ষীরা সমিতির দক্ষিণ পলাশপুর কার্যালয়ে টাকা উত্তোলন করতে গেলে আসামিরা প্রকাশ্যে জানিয়ে দেয়—"টাকা নাই, কিছুই পাওয়া যাবে না; বেশি বাড়াবাড়ি করলে হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলবে"। পরবর্তীতে ৫ জুলাই কাউনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার উদ্যোগে মীমাংসার চেষ্টা হলেও আসামিরা টাকা ফেরত দেয়নি।

বরিশাল জেলা সমবায় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, স্বপ্নছোয়া সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির নিবন্ধন ২০২৩ সালের ১৩ জানুয়ারি বাতিল করা হয়। নিবন্ধন বাতিলের পরও সমিতির নাম ব্যবহার করে আরিফ খন্দকার ও তার সহযোগীরা ২০২৫ সালের ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত চার সহস্রাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে কোটি টাকারও বেশি হাতিয়ে নেন। গ্রাহকরা টাকা চাইলে তাদেরও নানাভাবে ভয়ভীতি, হামলা-মামলার হুমকি দেয়া হতো বলে অভিযোগ রয়েছে।

আরিফ খন্দকারের প্রতারণার শিকার নগরীর বাটিখানা ও বাজার রোডের ব্যবসায়ী সিপন বলেন, স্বপ্নছোয়া সমবায় সমিতির কাছে আমার ৩ লক্ষাধিক টাকা পাওনা রয়েছে। টাকা চাইলে আগামী নির্বাচনের পরে দেয়ার কথা স্বীকার করেছে আরিফ খন্দকার। 

মামলার বাদী তানজিরুল ইসলাম তুষার অভিযোগ করেন—“আমি আমার শ্বশুর-শাশুড়ির টাকা ফেরত পেতে মামলা করতেই আরিফ খন্দকার ক্ষিপ্ত হয়ে আমার বিরুদ্ধে একাধিক মিথ্যা মামলা করেছে। তার স্ত্রী রিমা আক্তারকে দিয়ে আমার নামে মিথ্যে মানহানিকর মামলা পর্যন্ত করিয়েছে।” তিনি বলেন—“এরা সংগঠিত একটি প্রতারক চক্র। নিবন্ধন বাতিলের পরও সমিতির নামে কোটি কোটি টাকা তুলেছে। সাধারণ লোকজন তাদের কাছে জিম্মি। তার বিরুদ্ধে মামলা করায় প্রাননাশের হুমকি দিচ্ছে।” তুষার আরো বলেন, গ্রাহকদের জিম্মি করে কোটি টাকা আত্মসাতকারী আরিফ খন্দকার সহ প্রতারক চক্রের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী ও প্রশাসনের মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি। 

এ ঘটনায় ভুক্তভোগীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা বলেন, প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আরও অনেক গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

এ ব্যাপারে স্বপ্নছোয়া সমবায় সমিতির পরিচালক আরিফ খন্দকার অভিযোগ অস্বীকার করে মোবাইল ফোনে জানান, উপর মহলের অনুমতি ছাড়া তিনি কোন বক্তব্য দিবেন না। এ সময় তার সমিতির গ্রাহক সংখ্যা কত? পাওনা টাকার পরিমান কত? ও সর্বশেষ কবে টাকা উত্তোলন করেছেন এমন প্রশ্ন করা হলে সে কোন উত্তর দেননি।