Image description

সুনামগঞ্জের ছাতকের কৈতক হাসপাতাল এলাকায় উদ্বোধনের দুই বছর পরও চালু হয়নি ট্রমা সেন্টার। সড়ক দূর্ঘটনায় আহতদের উন্নত চিকিৎসা সেবা দিতে ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সুনামগঞ্জ জেলার ২০ শয্যা বিশিষ্ট এ ট্রমা সেন্টারটি অবহেলা আর অযত্নে পড়ে আছে।

নির্মানের পর জমকালো আয়োজনে উদ্বোধন হলেও আজ পর্যন্ত দেওয়া হয়নি চিকিৎসা সেবা, দরজায় ঝুলছে তালা, ঝং পড়েছে দরজা জানালায়। এটি দূর থেকে একটি ভবন দেখা গেলেও কাছে গেলে মনে হবে ভূতের বাড়ি। ভেতরে লতাপাতা আর পুকা মাকড়ে বেঁধেছে বাসা। অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে আছে সরকারের কোটি কোটি টাকার দৃষ্টিনন্দন ভবনটি। এরপরও ভবনে লাগানো আছে ১১টি এসি। এগুলোও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে দেখবালের অভাবে। দুই বছর আগে এ ট্রমা সেন্টার নির্মিত হলেও চিকিৎসা না পাওয়ায় এলাকাবাসী হতাশ।

জানা যায়, ২০২৩ সালে ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে উদ্বোধন করা হয় কৈতক ট্রমা সেন্টার। এটি সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহা সড়কের কৈতক হাসপাতালের পাশে অবস্থিত। সড়ক দূর্ঘটনায় আহতদের দ্রুত উন্নত চিকিৎসাসেবা দিতে এ ট্রমা সেন্টার নির্মাণ করা হয়েছিল। জেলার স্বাস্থ্যসেবায় নতুন মাত্রা যুগ করতে এই ট্রমা সেন্টার উদ্বোধন হলেও এখন পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। দুই বছর ধরে দৃষ্টিনন্দন ট্রমা সেন্টারে ঝুলে আছে তালা।

সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের জরুরী সেবা দেওয়ার জন্য নির্মিত এ প্রতিষ্ঠান এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। ব্যবহার না হওয়ায় নষ্ট হচ্ছে ১১ টি এসি। চিকিৎসা সরঞ্জাম, আসবাবপত্রের অভাব ও প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ না দেওয়ায় বিপুল অর্থ ব্যয়ে নির্মিত এই চিকিৎসা সেবা কেন্দ্রটি চালু হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। এতে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এ ট্রমা সেন্টার উদ্বোধনের পর সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহা সড়ক ছাড়াও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সড়ক দূর্ঘটনায় ঘটেছে প্রাণহানি। আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন অনেকেই। তারা চিকিৎসা নিয়েছেন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে।

সড়কের জয়কলস হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুমন কুমার চৌধুরী বলেন, সড়কের বিশ্বনাথের লামাকাজী টোল বক্স থেকে সুনামগঞ্জ শহরে প্রবেশের আগে হাসন রাজার তোরণ পর্যন্ত ৪৭ কিলোমিটার রয়েছে তাদের সীমানা। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত গত ১০ মাসে ৩৭টি সড়ক দূর্ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ২৭জন ব্যক্তি। আহত হয়েছেন ৬৫জন। এসব দূর্ঘটনায় মামলা রুজু হয়েছে ২১টি। 

তিনি বলেন, হাইওয়ের বিশ্বনাথ, ছাতক, শান্তিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মধ্যে বেশি দূর্ঘটনা ঘটেছে শান্তিগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায়। দূর্ঘটনা প্রতিরোধে তিনিসহ তার পুলিশ কাজ করছে। 

জানা গেছে, সড়ক দূর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হতো একমাত্র সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।   সুনামগঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের ৬৮ কিলোমিটারসহ ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের হবিগঞ্জের সীমানা পর্যন্ত ছিলনা কোন ট্রমা সেন্টার। এই অবস্থায় সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ, জগন্নাথপুর, দোয়ারা ও ছাতক উপজেলাবাসীর জন্য সুনামগঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের ৩১ কিলোমিটারের মাথায় কৈতকে স্থাপন করা হয়েছিল অত্যাধুনিক ট্রমা সেন্টার। এটি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হওয়ায় খুশি হয়েছিলেন এলাকাবাসী। উদ্বোধনের দীর্ঘদিন পরও চালু না হওয়ায় হতাশ স্থানীয়রা। পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ ও সরঞ্জাম দিয়ে দ্রুত ট্রমা সেন্টার চালুর দাবি স্থানীয়দের।

এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন জসিম উদ্দিন বলেন, জনবল না থাকায় ট্রমা সেন্টারটি চালু হয়নি। ইতোমধ্যে জনবল নিয়োগ দিতে সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।