Image description

দীর্ঘ ১৪ বছরের দাম্পত্য জীবনের ১২ বছর কাটিয়েছেন অসহ্য মানসিক যন্ত্রণা, পরকীয়ার অভিযোগ, অপমান আর অশান্তির মধ্য দিয়ে। নবপল্লীর প্রবীর সরদার অবশেষে সেই দহন থেকে মুক্তি নিতে সোমবার (২৪ নভেম্বর) সকালে পাইকগাছা পৌরসভা কেন্দ্রীয় মন্দিরে প্রতীকী দুধের গোসল সম্পন্ন করেন। 

তার দাবি, স্ত্রী রিংকু মন্ডলের ধারাবাহিক পরকীয়া ও সন্দেহজনক কর্মকাণ্ড তার জীবনকে অসহনীয় করে তুলেছিল।

রিংকু মন্ডল, উপজেলার কপিলমুনির হাওলী গ্রামের নির্মল মন্ডলের মেয়ে। বিয়ের পর থেকেই তার নানা অনৈতিক সম্পর্ক সামাজিকভাবে আলোচনায় ছিল বলে দাবি এলাকাবাসীর। বহুবার পরকীয়া নিয়ে সালিশ হলেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। প্রবীর একমাত্র বাকপ্রতিবন্ধী ছেলের ভবিষ্যৎ ভেবে সব সহ্য করে গেছেন।

গত ১৩ অক্টোবর রিংকুকে পার্শ্ববর্তী কয়রা উপজেলার নিত্যানন্দ মন্ডলের সঙ্গে পাইকগাছায় সদরে একটি ভাড়া বাসায় ঘরের ভিতর আপত্তিকর অবস্থায় দেখতে পান স্থানীয়রা। পরে দুজনকে আটক রেখে বিষয়টি সালিশে তোলা হয়। সমাজপতিরা তখন রিংকুকে প্রবীরের ঘর থেকে বের করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

পাইকগাছা কেন্দ্রীয় মন্দিরে সোমবার প্রবীরের দুধ দিয়ে গোসলের ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এটি হিন্দুধর্মে অশুদ্ধতা ও যন্ত্রণা থেকে প্রতীকীভাবে মুক্তির প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক সমাজপতি বলেন, একজন মানুষ কতটা সহ্য করলে ভেঙে পড়ে জানেন? প্রবীর সেই সহ্যের শেষ সীমা পেরিয়ে গেছে বহু আগেই—তবুও ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে সংসার টেনে নিয়েছে। আমরা সমাজের মানুষ হয়েও তার পাশে দাঁড়াতে পারিনি। রিংকুর পরকীয়ার পথ রোধ করতে পারিনি। আজ যখন তাকে দুধ দিয়ে গোসল করতে দেখলাম, মনে হলো একজন মানুষ শুধু সম্পর্ক নয়—অপমান আর যন্ত্রণার আগুন থেকে মুক্তি নিচ্ছে। এই ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল—নৈতিকতার ভাঙন কত ভয়ংকর।

আরেকজন প্রতিবেশী বলেন, রিংকুর আচরণ বহুদিনের সমস্যা ছিল। প্রবীর সবসময় চেয়েছে সংসার বাঁচাতে। কিন্তু একজন মানুষ একা কতটুকু পারবেন?

এলাকার মানুষের মতে, এ ধরনের ঘটনা রোধে আগে থেকেই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার ছিল। সমাজপতিরা, পরিবার বা স্থানীয় প্রশাসন সময়মতো হস্তক্ষেপ করলে হয়তো এমন চরম পরিস্থিতি আসতো না।

প্রবীর বলেন, ছেলের ভবিষ্যতের কথা ভেবে সবকিছু সহ্য করেছি। আজ আমি শুধু শান্তিতে থাকতে চাই। তাই দুধ দিয়ে গোসল করে নতুন করে জীবন শুরু করতে চাই।