Image description

বেতন-ভাতা বৃদ্ধি ও ১১তম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজবাড়ীতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের পরীক্ষা বর্জনের ঘটনায় তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এর জেরে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা।

সোমবার (১ ডিসেম্বর) সকালে রাজবাড়ী শহরের পান্না চত্বর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও জেলা প্রশাসনকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। পরে আলোচনার মাধ্যমে বিলম্বে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সকালে শতাধিক অভিভাবক তাদের সন্তানদের নিয়ে বার্ষিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য বিদ্যালয়ে উপস্থিত হন। কিন্তু শিক্ষকরা পরীক্ষা না নেওয়ার ঘোষণা দিলে অভিভাবকরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে তারা পান্না চত্বর এলাকায় সড়ক অবরোধ করে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। এতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। খবর পেয়ে পুলিশ ও জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তার ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

অভিভাবক হোসনেয়ারা বলেন, ‘আজ আমার বাচ্চার ইংরেজি পরীক্ষা ছিল। শীতের সকালে বাচ্চাকে নিয়ে স্কুলে এসে শুনি পরীক্ষা হবে না। এটা বার্ষিক পরীক্ষা, বছরের শেষ। বাচ্চারা নতুন ক্লাসে উঠবে। শিক্ষকদের এমন সিদ্ধান্তে আমরা হতাশ। আমি সহ শতাধিক অভিভাবক টাউন মক্তবের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম, আর শিক্ষকরা তাদের রুমে বসে ছিলেন।’

আরেক অভিভাবক রাজীব হাসান বলেন, ‘শিক্ষকদের ন্যায্য দাবি আদায় হোক তা আমরাও চাই। কিন্তু কোমলমতি শিশুদের জিম্মি করে কেন? এতে বাচ্চাদের মনে ভীতি তৈরি হচ্ছে এবং তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার দিকে যাচ্ছে।’

রাজবাড়ী টাউন মক্তব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জুন কক্স জানান, সহকারী শিক্ষকরা কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রথমে পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে এবং অভিভাবকদের সঙ্গে আলোচনার পর পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘সকাল ১০টার পরীক্ষা বেলা সাড়ে ১১টায় এবং দুপুর দেড়টার পরীক্ষা ২টায় নেওয়া হয়েছে। শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করে এবং অভিভাবকদের সহযোগিতায় এই পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে।’

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তার বলেন, ‘শিক্ষকদের ন্যায্য দাবি থাকলে তারা লিখিত আকারে আমাদের জানাতে পারেন। কিন্তু এভাবে পরীক্ষা বর্জন করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেওয়া কাম্য নয়।’

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তাবিবুর রহমান জানান, ‘দাবি আদায়ে শিক্ষকরা প্রথমে পরীক্ষা বর্জনের ডাক দিলেও পরে আলোচনার মাধ্যমে পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়েছে। তবে তা নির্ধারিত সময়ে শুরু করা যায়নি। পরবর্তী পরীক্ষাগুলো নির্ধারিত সময়েই নেওয়া হবে। কোনো শিক্ষক দায়িত্বে অবহেলা করলে বা অনুপস্থিত থাকলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, গত ৩০ নভেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে ১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য তৃতীয় প্রান্তিক (বার্ষিক) পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য সকল জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।