সুনামগঞ্জের ছাতকে সাংবাদিকদের সাথে অসাধু আচরন ও নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে বিতর্কিত হয়ে ওঠা বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ (বিউবো) ছাতকের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল মজিদকে অবশেষে ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় বদলি করা হয়েছে।
গত ২৩ নভেম্বর বদলির আদেশ জারি হলেও নানা কৌশলে দীর্ঘদিন তা ঠেকানোর চেষ্টা করেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) ছাতক ত্যাগ করতে বাধ্য হন এই প্রকৌশলী। তার বিদায়ে উপজেলাজুড়ে স্বস্তি নেমে এসেছে।
স্থানীয় ভুক্তভোগীদের অভিযোগ-বর্তমান সময়ের অন্যতম দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত এই প্রকৌশলীর বদলিতে স্বস্তি ফিরলেও তার সহযোগীরা বহাল থাকায় সাধারণ গ্রাহকরা এখনও পুরোপুরি নিরাপদ নন। তাদের দাবি, সিন্ডিকেটভুক্ত অন্যান্য দুর্নীতিবাজ কর্মচারীদের অপসারণ না হলে এ কার্যালয় কলঙ্কমুক্ত হবে না; বরং ঘুষ, অনিয়ম ও মামলা বাণিজ্যের মহোৎসব চলতেই পারে।
জানা যায়, গত ৩ নভেম্বর তাকে বান্দরবান বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগে বদলি করা হলেও তিনি সেখানে যোগ না দিয়ে ছাতকেই বহাল থাকেন। এ সময় বদলি ঠেকানোর পাশাপাশি তিনি নানা অনিয়ম অব্যাহত রাখেন বলে অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় ও জাতীয় একাধিক গণমাধ্যমে মামলা বাণিজ্য, ঘুষ ও অন্যান্য দুর্নীতির খবর প্রকাশিত হলে বিষয়টি নিয়ে নড়ে চড়ে বসে বিউবো কর্তৃপক্ষ। পরে ২৩ নভেম্বর নতুন করে তাকে ময়মনসিংহের ভালুকায় বদলির আদেশ দেওয়া হয়।
সম্প্রতি তার কার্যালয়ে চলমান অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে বক্তব্য নিতে গেলে ছাতকের গণমাধ্যমকর্মীরা অন্তত ৪০ মিনিট বাইরে অপেক্ষা করতে বাধ্য হন। কার্যালয়ের ভেতরে তখন চলছিল অভিযোগপত্র ও মামলা বাণিজ্যের গোপন কার্যক্রম। পরে সাক্ষাতের অনুমতি মিললেও তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে অসদ আচরণ করেন এবং নিজ মোবাইলে তাদের ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইলের চেষ্টা করেন-যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও স্থানীয় মহলে সমালোচনার ঝড় তোলে। ভুল তথ্যের ভিত্তিতে থানা পুলিশ পর্যন্ত কার্যালয়ে যেতে বাধ্য হয়। পরে তিনি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধেও থানায় লিখিত অভিযোগ দেন।
২০২২ সালের ৩০ এপ্রিল ছাতকে যোগদানের পর থেকেই আবদুল মজিদ ও তার অধীনস্থ কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে ঘুষ, মামলা বাণিজ্য, মিটার-ট্রান্সফর্মার পরিবর্তন ও নতুন সংযোগে অতিরিক্ত টাকা আদায়সহ নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে।
স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, ছাতকে যোগদানের পর তিনি দালালচক্র ও অস্থায়ী কর্মচারীদের নিয়ে একটি সক্রিয় সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। এই সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েন সাধারণ গ্রাহক থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধি, দিনমজুর, মসজিদের ইমাম-মোয়াজ্জেন এমনকি প্রতিবন্ধী ভিক্ষুকও।
বিদ্যুৎ লাইনের খুঁটি সংস্কার বা রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বিভিন্ন এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ তার ঝুলে থাকার কারণে বহু গবাদিপশু ও মানুষের মৃত্যু হলেও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো আজও ক্ষতিপূরণ পায়নি। তার এমন কার্যক্রমে হতাশ স্থানীয়রা।




Comments