খরচ বেড়েছে ঢের, তবু লাভের আশায় আগাম আলু বুনছেন মুন্সীগঞ্জের কৃষক
শীতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গেই মুন্সীগঞ্জের বিস্তীর্ণ ফসলি মাঠে শুরু হয়েছে আলু রোপণের উৎসব। বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার পর জেগে ওঠা জমিতে এখন হাড়ভাঙা খাটুনি আর নতুন স্বপ্নের বুনন। রাজধানী ঢাকার নিকটবর্তী ও আলু উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত এই জেলায় এবারও বাম্পার ফলনের আশায় মাঠে নেমেছেন কৃষকরা। তবে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা বাড়লেও বীজের ঘাটতি আর চাষাবাদের চড়া খরচ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন চাষিরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মুন্সীগঞ্জ সদর, শ্রীনগর, সিরাজদিখান, লৌহজং, টঙ্গীবাড়ী ও গজারিয়া এই ছয়টি উপজেলা নিয়ে গঠিত জেলায় মোট ৬৮টি ইউনিয়ন রয়েছে। এবার জেলার ৩৪ হাজার ৬৫৫ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা গত বছরের (৩৪ হাজার ৫৫ হেক্টর) তুলনায় কিছুটা বেশি। এবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ১১ লাখ মেট্রিক টন।
সরেজমিনে দেখা যায়, মুন্সীগঞ্জ সদর, শ্রীনগর ও সিরাজদিখানের কিছু এলাকায় আগাম আলু রোপণ শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০০ হেক্টর জমিতে আলু রোপণ সম্পন্ন হয়েছে। তবে পুরোদমে রোপণ শুরু হতে আরও সপ্তাহ দুয়েক সময় লাগবে। মাঠজুড়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন স্থানীয় কৃষকদের পাশাপাশি সুনামগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, নীলফামারী ও ময়মনসিংহ থেকে আসা নারী-পুরুষ শ্রমিকরা। টঙ্গীবাড়ীর হাসাইলসহ বিভিন্ন গ্রামে স্থানীয় নারী ও গৃহবধূরাও বাড়তি আয়ের আশায় বীজ আলু কাটার কাজে যুক্ত হয়েছেন।
তবে কৃষকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে বীজের সংকট ও উচ্চমূল্য। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় আলুর বীজের চাহিদা ৬৯ হাজার ৩১০ মেট্রিক টন। এর বিপরীতে মজুদ রয়েছে ৫৪ হাজার ৬৭০ মেট্রিক টন। অর্থাৎ, প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার মেট্রিক টন বীজের ঘাটতি রয়েছে।
কৃষকরা জানান, বর্তমানে প্রতি বস্তা বীজ আলুর দাম ৪ হাজার টাকা এবং প্রতি বক্স আলুর দাম ২ হাজার ৫০০ টাকা। গত বছরের তুলনায় এবার কানি প্রতি উৎপাদন খরচ ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গত বছর আগাম আলুতে ভালো দাম না পেলেও এবার দ্বিগুণ লাভের আশায় ঝুঁকি নিয়েই অনেকে আগাম চাষে নেমেছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন, ‘জেলায় প্রায় ৭৫ থেকে ৮০ হাজার কৃষক পরিবার আলু আবাদের সঙ্গে জড়িত। বীজের কিছুটা ঘাটতি থাকলেও আমরা আশা করছি লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে এবং কৃষকরা লাভবান হবেন।’
জেলার অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা এই আলু চাষে জড়িয়ে আছে হাজারো কৃষকের স্বপ্ন। তবে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি আর বীজের সংকট না কাটলে সেই স্বপ্ন কতটা পূরণ হবে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।




Comments