১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে প্রকৃত আসামির জেল খাটছে ভাড়াটে আসামি
গাজীপুর জেলা কারাগারে মাত্র ১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে প্রকৃত আসামী ছাওারের জেল খাটছে ভাড়াটে আসামী সাইফুল ইসলাম। গোপন বিষয়টি ফাঁস হওয়ার পর এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। বন বিভাগের দায়ের করা এক মামলায় প্রকৃত আসামি ছাত্তার মিয়া বাইরে অবাধে ঘুরে বেড়ালেও তাঁর পরিবর্তে জেলখানায় বন্দি আছেন সাইফুল নামে এক ভাড়াটে আসামি। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর এলাকায় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
প্রকৃত আসামী সাত্তার মিয়া হলেন, কালিয়াকৈর উপজেলার মোথাজুরী তালচালা এলাকার আলফাজ উদ্দিনের ছেলে ছাত্তার মিয়া (৪৫)। তার পরিবর্তে কারাগারে থাকা সাইফুল ইসলাম হলেন, একই এলাকার রহিম বাদশার ছেলে সাইফুল ইসলাম (৩০)।
স্থানীয়রা জানায়, মামলার ঝামেলা এড়াতে ছাত্তার মিয়া পরিচয় গোপন করে সাইফুলকে হাজতে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। অভিযোগ রয়েছে সাত্তারের লোকজন সাইফুলকে অর্থের লোভ দেখিয়ে তার নামে কাগজপত্র তৈরি করিয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করান। পরে আদালতের আদেশে সাইফুলকে গাজীপুর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের কাচিঘাটা রেঞ্জ এলাকা থেকে চলতি বছরের ৯ সেপ্টেম্বর বন থেকে সরকারি গাছ কাটার সময় বন কর্মকর্তারা। হাতেনাতে কয়েকজনকে আটক করেন। এসময়ে বেশ কয়েকজন পালিয়ে যায়। ওই ঘটনায় পরে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করে বন বিভাগ। এ ঘটনার তিন মাস পর গত ৭ ডিসেম্বর আদালতে হাজিরা দেয় প্রধান আসামি ছাত্তার মিয়া। অভিযোগ আমলে নিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, যে সাত্তারের থাকার কথা কারাগারে, তিনি দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন নিজ এলাকাতেই। তার পরিবর্ততে জেল খাটছেন অন্য সাত্তার মিয়া। অর্থাৎ সাইফুল ইসলাম ছাওার নামে গাজীপুর কারাগারে রয়েছে।
কালিয়াকৈর কাচিঘাটা রেঞ্জের কাচিঘাটা বিট অফিসার শরিফ খান বলেন, স্থানীয়দের অস্ত্রের মুখে আমরা অসহায় তাই আলামত জব্দ করে ফিরে এসে মামলা দায়ের করি।
কালিয়াকৈরে উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের তালচালা এলাকায় বাড়িতে নেই সাত্তার। ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ব্যাক্তিগত কাজে অবস্থান করছেন মাওনা এলাকায়। যদিও আদালতের নথি বলছে, এই মুহূর্তে তার থাকার কথা গাজীপুর জেলা কারাগারে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাজীপুর জেলা কারাগারে যে আসামী বন্দি আছেন নথিতেও ওই বন্দির নাম সাত্তার লিখা রয়েছে। কিন্তু ছবি মেলাতে গেলেই ধরা পড়ে যায় মুল ঘটনা। জেলে থাকা ব্যক্তির প্রকৃত পরিচয় সাইফুল ইসলাম। তিনি ছাত্তারের হয়ে ১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে জেলে গিয়েছেন। বিষয়টি তার আইনজীবী শ্যামল সরকার বিষয়টি জানলেও আদালতে তথ্য গোপন করে ছাত্তারের পরিবর্তে সাইফুলকে আদালতে হাজির করা হয়।
সাত্তার পরিচয়ে কারাগারে থাকা সাইফুলের বাবা রহিম বাদশা বলেন, জামিন পাইয়ে দেয়ার আশ্বাসে ১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে ছাত্তারের পরিবর্ত হাজিরা দিতে গেছিল সাইফুল।
গাজীপুর জেলা কারাগারের জেল সুপার মোহাম্মদ রফিকুল কাদের বলেন, আসামী এন্ট্রি করার সময় সে তার নাম সাত্তার বলেছে তাই সন্দেহ করিনি। পরবর্তীতে জানার পর বায়োমেট্রিক পরিক্ষা করে জানতে পারি সে আসলে ছাত্তার না সাইফুল। বিষটি আমরা আদালতে চিঠি দিয়ে অবগতি করেছি।




Comments