Image description

সিলেটের গোয়াইনঘাটে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জোরপূর্বক বেড়িবাঁধ নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো ফল পাননি উপজেলার ডৌবাড়ী গ্রামের মৃত সরাফত আলীর ছেলে মো. শাহজাহান।

এর আগে উপজেলার ডৌবাড়ী গ্রামের শাহজাহান ও গ্রামবাসী বাদী হয়ে মাতাব উদ্দিনসহ ২৪ জনকে বিবাদী করে গোয়াইনঘাট সিভিল জজ আদালতে একটি স্বত্ব মামলা (নম্বর ১৮৮/২৫ ইং) দায়ের করেন। ওই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩০ নভেম্বর আদালত বিবাদীদের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন।

আদালতের আদেশে উল্লেখ করা হয়, নালিশা ভূমিতে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে পানি চলাচলে বাধা সৃষ্টি করা যাবে না এবং ভূমির আকার-আকৃতি পরিবর্তন করা যাবে না। কিন্তু বিবাদী পক্ষ আদালতের এই আদেশ অমান্য করে বেড়িবাঁধ নির্মাণ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। এমতাবস্থায় আদালতের আদেশ লঙ্ঘন করে নতুন করে কার্যক্রম না চালানোর প্রতিকার চেয়ে ডৌবাড়ী গ্রামবাসীর পক্ষে শাহজাহান বাদী হয়ে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তবে অভিযোগ দিয়েও শাহজাহান ও ডৌবাড়ী গ্রামবাসী এখনো কোনো প্রতিকার পাননি বলে অভিযোগ করেছেন।

সিলেটের গোয়াইনঘাট সিভিল জজ আদালতের আদেশ সূত্রে জানা গেছে, বাদীপক্ষ শপথনামা সহকারে দেওয়ানি কার্যবিধি আইনের ১নং আদেশের ৮নং রুলের বিধানমতে স্বত্ব মোকদ্দমায় স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দাবিতে গ্রামবাসীর বাদী-বিবাদী শ্রেণিতে পক্ষভুক্ত হওয়ার মর্মে এক বিজ্ঞপ্তি প্রচারের অনুমতির প্রার্থনা করে। বাদীপক্ষের নিযুক্তীয় আইনজীবীর দীর্ঘ বক্তব্য শ্রবণ ও নথিপত্র পর্যালোচনা করে ন্যায়বিচারের স্বার্থে আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করেন এবং বাদীপক্ষকে পত্রিকা বিজ্ঞপ্তির নমুনা দাখিলের নির্দেশ দেন।

একইসঙ্গে বাদীপক্ষ প্রার্থনা করেন যে, তফসিল বর্ণিত ভূমিতে বাদীগণের শান্তিপূর্ণ ভোগদখলে বিবাদীগণ যেন কোনো প্রকার বাধা-বিঘ্ন সৃষ্টি করতে না পারেন, জোরপূর্বক বেদখল করে আকার-আকৃতি পরিবর্তন করতে না পারেন কিংবা বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে পানি চলাচলে বাধা ও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করতে না পারেন সেজন্য ১নং বিবাদী মাতাব উদ্দিনসহ ২৪ জন বিবাদীর বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞার আদেশ এবং গোয়াইনঘাট থানা পুলিশকে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার নির্দেশ দেওয়া হোক।

গোয়াইনঘাট সিভিল জজ আদালতের বিচারক মো. মেহেদী হাসান সুমন বাদীপক্ষের আইনজীবীর বক্তব্য শোনেন। দেওয়ানি কার্যবিধি (The Code of Civil Procedure) ১৯০৮-এর ৩৯ আদেশের ১ বিধিমতে তফসিল বর্ণিত ভূমিতে বাদীগণের শান্তিপূর্ণ ভোগদখলে বাধা সৃষ্টি, আকার-আকৃতি পরিবর্তন, গোচারণে বাধা কিংবা বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করার জন্য ১ থেকে ২৪ জন বিবাদীর বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন। একইসঙ্গে নোটিশ প্রাপ্তির ৩০ দিনের মধ্যে বিবাদীদের কারণ দর্শানোর নির্দেশ প্রদান করেন আদালত।

এদিকে একই সাথে নালিশা ভূমিতে বাদীপক্ষের  প্রিমা ফেইস কেস  বিদ্যমান থাকায় ১ম তফসিল তুরালকান্দি মৌজার ১৯৯ জেএল স্থিত ১ নং খতিয়ানের ১ নং দাগের এসএ ৬৩,৬৪ ও বিএস ৯২, ৯০ দাগে ৮২.৬৫ এবং  ৫৪.০৮ একর গোচর শ্রেনী ভূমি। ২য় তফশিল নিহাইন মৌজার ২৫৩ জেএল স্থিত ১ নং খতিয়ানে  এসএ দাগ নং ৬৭৫ বিএস ১১০২ দাগে ৬.২৮ একর গোচর শ্রেনী ভূমি। ৩য় তফশিল সাতকুরী কান্দি মৌজার এসএ  ২৫০ জেএল এবং বিএস ১৯৭  জেএল স্থিত এসএ খতিয়ান ১ ও বিএস ১ এসএ দাগ ২৩৯ বিএস  ১২২ দাগে ১৪০.৫০ একর গোচর শ্রেনী ভূমি। বর্নিত ভূমিতে পরবর্তী আদেশ না দেওয়া  পর্যন্ত বিবাদীগণকে উল্লেখিত তফশীল বর্নিত ভূমিতে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ প্রদান করে সিভিল জজ মোঃ মেহেদী হাসান সুমন।আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করার প্রতিবাদ করে আসছেন এবং গোয়াইনঘাট  উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে প্রতিকার চেয়ে  লিখিত অভিযোগ করেন  শাহজাহান গং।

এদিকে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করার প্রতিবাদ করে আসছেন স্থানীয়রা। এ বিষয়ে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার রতন কুমার অধিকারী মানবকণ্ঠকে বলেন, “এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”