Image description

রাজশাহীর চারঘাট উপজেলায় সাধারণ মানুষের অভিযোগের জবাবে ‘তথ্য অস্পষ্ট’, ‘দেখছি’, ‘ব্যবস্থা নেব’ এমন গৎবাঁধা বুলি আউড়েই বছর পার করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জান্নাতুল ফেরদৌস। অন্যদিকে, পৌর নির্বাহী প্রকৌশলী আতাউর রহমানের বিরুদ্ধেও রয়েছে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ। এই দুই কর্মকর্তার স্বেচ্ছাচারিতায় উপজেলার প্রশাসনিক ও পৌর নাগরিক সেবা ভেঙে পড়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

জানা গেছে, চারঘাট উপজেলার ইউএনও হিসেবে জান্নাতুল ফেরদৌসের যোগদানের প্রায় এক বছর অতিবাহিত হয়েছে। বর্তমানে তিনি একাধারে ইউএনও, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং পৌর প্রশাসকের দায়িত্বে রয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ তিনটি পদে থাকার ফলে তার কাজের পরিধি ও ক্ষমতা ব্যাপক। কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ, গত এক বছরে জনস্বার্থে তিনি কোনো উল্লেখযোগ্য কাজ করেননি। বরং তার দপ্তর ও পৌর প্রশাসনের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি এবং সেবার মান নিয়ে জনমনে তীব্র অসন্তোষ বিরাজ করছে।

অভিযোগ রয়েছে, পৌর নির্বাহী প্রকৌশলী আতাউর রহমান সুকৌশলে কলকাঠি নেড়ে পৌর প্রশাসনকে দুর্নীতির মায়াজালে আবদ্ধ করে রেখেছেন। ইতোপূর্বে পৌরসভার কোটি কোটি টাকার অনিয়মের তদন্তে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সত্যতা পেলেও থামেনি লুটপাট। ড্রেনেজ ব্যবস্থা, সড়কবাতি, মশা নিধনসহ নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতে সরকারি বরাদ্দের কোটি কোটি টাকা খরচ দেখানো হলেও বাস্তবে তার কোনো সুফল মিলছে না।

স্থানীয় সাংবাদিক ও ভুক্তভোগীদের সূত্রে জানা যায়, ইউএনও’র মেয়াদকালে অন্তত ১২টি আইন-শৃঙ্খলা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব সভায় মাদক, অবৈধ ইটভাটা, অবৈধ পুকুর খনন, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি, ফুটপাত দখল, অনুমোদনহীন করাতকল এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের নানা অনিয়ম তুলে ধরা হয়। কিন্তু সভার আলোচনা কেবল টেবিলেই সীমাবদ্ধ থাকছে, বাস্তবে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও বরাবরের মতোই ‘দেখছি’ বা ‘জানতাম না’ বলে এড়িয়ে যান।

চারঘাট রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি ও উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সদস্য জানান, তার নিজের বাড়ির যাতায়াতের রাস্তার সমস্যা নিয়ে তিনি বারবার ইউএনওকে অবগত করেও কোনো প্রতিকার পাননি। শেষ পর্যন্ত উপজেলা বিএনপি সভাপতি জাকিরুল ইসলাম বিকুল বিষয়টি সমাধান করেন। প্রশাসনের এমন নিষ্ক্রিয়তায় সাধারণ মানুষ আস্থা হারাচ্ছে।

পৌর এলাকার একাধিক বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডেই রাতে ভুতুড়ে অন্ধকার থাকে, ড্রেনেজ ব্যবস্থা অস্বাস্থ্যকর। অথচ সরকারি বরাদ্দ আসছে নিয়মিত।

এ বিষয়ে চারঘাট উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুরাদ পাশা বলেন, ‘বর্তমান ইউএনও’র কাজ করার মানসিকতার অভাব রয়েছে। ইউএনও এবং পৌর প্রকৌশলী যোগসাজশে রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করে অর্থ লুটপাট করছেন। আমরা বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে তদন্ত কমিটি গঠন করে এসব অনিয়মের বিচার দাবি করছি।’

সার্বিক বিষয়ে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক (ডিসি) আফিয়া আক্তার বলেন, ‘জনগণের সেবা দেওয়ার জন্যই কর্মকর্তাদের পদায়ন করা হয়। ইউএনও এবং প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো গুরুত্বসহকারে দেখা হবে। সেবার মান নিয়ে কোনো গাফিলতি বা অনিয়ম প্রমাণিত হলে সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইন সবার জন্য সমান।’