Image description

ঢাকার ধামরাই উপজেলার শহর থেকে গ্রাম সবখানেই এখন মাদকের অবাধ বিস্তার। হাত বাড়ালেই মিলছে গাঁজা, ফেনসিডিল, হেরোইন, ইয়াবা ও দেশি-বিদেশি মদ। সহজলভ্য হওয়ায় উঠতি বয়সের তরুণরা যেমন মাদকসেবনে জড়াচ্ছে, তেমনি দ্রুত অর্থের লোভে জড়িয়ে পড়ছে মাদক কারবারেও। ফলে চরম হুমকিতে পড়েছে উপজেলার যুবসমাজ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হিসেবে পুলিশ ও র‍্যাব তৎপর থাকলেও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

সরেজমিনে ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ধামরাইয়ের প্রায় প্রতিটি হাটবাজার, বাসস্ট্যান্ড, অলিগলি ও রাস্তার মোড়ে মাদক কেনাবেচা চলছে। মাদক কারবারিদের শক্তিশালী সিন্ডিকেটের কারণে লাগাম টানা যাচ্ছে না। পুলিশ ও র‍্যাব নিয়মিত অভিযান চালালেও জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কার্যক্রম দৃশ্যমান নয়।

ধামরাই থানা ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ঢাকা ‘ক’ সার্কেলের (সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাই) কার্যালয়ে একজন পরিদর্শকের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের একটি দল রয়েছে। অথচ গত জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এই পাঁচ মাসে ধামরাইয়ে তারা অভিযান চালিয়েছে মাত্র ৪টি।

অন্যদিকে, একই সময়ে (জুলাই-নভেম্বর) ধামরাই থানায় মাদকের মামলা হয়েছে মোট ৮২টি। এর মধ্যে পুলিশ বাদী হয়ে করেছে ৭৭টি মামলা, র‍্যাব-4 করেছে ১টি এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর করেছে মাত্র ৪টি। সর্বশেষ নভেম্বর মাসে থানায় মাদকের ৯টি মামলা হলেও তাতে নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কোনো ভূমিকা ছিল না; যার মধ্যে ৮টি পুলিশ ও ১টি র‍্যাবের মামলা। স্থানীয়দের অভিযোগ, বিশেষায়িত সংস্থা হওয়ার পরও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর অনেকটা হাত গুটিয়ে বসে আছে।

মাদকের এমন ভয়াবহতায় উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও সচেতন মহল। স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, ‘মাদক এখন সব জায়গায়। নেশার টাকার জন্য সন্তান মা-বাবাকে খুন করছে এমন খবরও আমরা দেখছি। মাদকাসক্তরা পরিবার ও সমাজের জন্য ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে।’

জহিরুল ইসলাম নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘মাদক কারবারিদের আইনের আওতায় না আনা পর্যন্ত এই সমস্যার সমাধান হবে না।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্কুলশিক্ষক বলেন, ‘শুধু অভিযান নয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে হবে। আইনি তৎপরতা আরও জোরদার করা প্রয়োজন।’

সার্বিক বিষয়ে ধামরাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘থানা পুলিশের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। সম্প্রতি কালামপুর ও কাউয়ালিপাড়া এলাকাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে বড় চালানসহ অনেক মাদক কারবারিকে আমরা আইনের আওতায় এনেছি। মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত থাকবে।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে ঢাকা বিভাগীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক এ কে এম শওকত ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।