যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির ঘোষণা পরও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে সীমান্তে সংঘাত থামেনি। চলছে উভয় দেশের বাহিনীর মধ্যে পাল্টাপাল্টি বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণ। পাল্টাপাল্টি হামলায় প্রাণহানি ও লোকজনের ব্যাপক বাস্তুচ্যুতির মধ্যে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। খবর বিবিসি
মূলত দুই দেশ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে বলে ট্রাম্প ঘোষণা দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরও লড়াই অব্যাহত রয়েছে।
থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী আনুতিন চার্নভিরাকুল বলেন, কম্বোডিয়া সব সেনা প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত এবং সীমান্তে পুঁতে রাখা স্থলমাইন অপসারণ না করা পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি সম্ভব নয় বলে তিনি ট্রাম্পকে জানিয়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি লেখেন, ‘আমাদের ভূখণ্ড ও জনগণের প্রতি কোনও ধরনের ক্ষয়ক্ষতি বা হুমকি থাকা পর্যন্ত থাইল্যান্ড সামরিক অভিযান চালিয়ে যাবে। আমি বিষয়টি স্পষ্ট করে বলতে চাই, আজ সকালে আমাদের পদক্ষেপই তার প্রমাণ।’
এদিকে শনিবার সীমান্তজুড়ে উভয় পক্ষই বোমাবর্ষণ ও গোলাবিনিময় অব্যাহত থাকার কথা জানিয়েছে। কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, থাই যুদ্ধবিমান হোটেল ভবন ও একটি সেতুতে বোমা ফেলেছে। অন্যদিকে থাইল্যান্ড জানিয়েছে, কম্বোডিয়ার রকেট হামলায় কয়েকজন বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছেন।
নতুন করে শুরু হওয়া এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত অন্তত ২১ জন নিহত হয়েছেন এবং দুই দেশের মিলিয়ে প্রায় সাত লাখ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। অবশ্য চলতি সপ্তাহের শুরুতে ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, ফোনে কথা বলেই তিনি থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে গত সোমবার শুরু হওয়া সংঘাত থামাতে পারবেন।
এমন অবস্থায় শুক্রবার রাতে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার পর মার্কিন রিপাবলিকান এই প্রেসিডেন্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, দুই দেশ ‘আজ সন্ধ্যা থেকেই গোলাগুলি বন্ধে’ সম্মত হয়েছে এবং উভয় দেশই এখন গত অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের উপস্থিতিতে স্বাক্ষরিত চুক্তিতে ফিরে যাবে। দুই দেশই শান্তির জন্য প্রস্তুত বলেও দাবি করেন তিনি।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলার পর উভয় পক্ষের বক্তব্যে তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতির কোনও ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। আনুতিন বলেন, তিনি ট্রাম্পকে স্পষ্ট করে জানিয়েছেন যে থাইল্যান্ড আগ্রাসী নয় এবং যুদ্ধবিরতির আগে কম্বোডিয়াকে প্রমাণ দেখাতে হবে যে তারা সেনা প্রত্যাহার ও স্থলমাইন অপসারণ করেছে। আগে তাদের আগ্রহ দেখাতে হবে। অন্যদিকে কম্বোডিয়ার নেতৃত্ব বলছে, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য তাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।
এর আগে গত জুলাই মাসে উভয় দেশের সংঘাত থামাতে শুল্ক আরোপের কথা উঠলেও এবার সংঘাত থামাতে শুল্ক আরোপকে চাপ হিসেবে ব্যবহারের কোনও কথা ওঠেনি। থাইল্যান্ড আগেই যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছিল যে এই সংঘাতকে যেন বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত করা না হয়।
এদিকে শনিবার কম্বোডিয়া আরও জানায়, দেশটি নতুন করে থাই বিমান হামলার শিকার হয়েছে। কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক্সে দেয়া পোস্টে জানায়, ‘১৩ ডিসেম্বর থাই সেনাবাহিনী দুটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে সাতটি বোমা নিক্ষেপ করেছে। থাই সামরিক বিমান হামলা এখনও বন্ধ হয়নি।’
অন্যদিকে লড়াই অব্যাহত রয়েছে বলে থাই সেনাবাহিনীও নিশ্চিত করেছে।
প্রসঙ্গত, দুই দেশ এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে প্রায় ৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ স্থলসীমান্ত নিয়ে বিরোধে জড়িত। ১৯০৭ সালে কম্বোডিয়ায় ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসনামলে ফরাসি মানচিত্রকাররা এই সীমান্ত নির্ধারণ করেছিলেন।




Comments