Image description

ময়মনসিংহের গৌরীপুরে প্রচলিত আইন ও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ফসলি জমিতে গড়ে উঠেছে একের পর এক অবৈধ ইটভাটা। এসব ইটভাটা কৃষি জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি (টপ সয়েল) গ্রাস করার পাশাপাশি বিষাক্ত ধোঁয়ায় বিপন্ন করছে পরিবেশ। ফলে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে স্থানীয় কৃষি ও জনস্বাস্থ্য।

ইট প্রস্তুত ও ভাটা (নিয়ন্ত্রণ) আইন অনুযায়ী কৃষি জমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বনাঞ্চল ও জনবসতিপূর্ণ এলাকায় ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ হলেও গৌরীপুরে প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় তা মানা হচ্ছে না। অধিকাংশ ভাটায় নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, বিএসটিআই’র সনদ বা জেলা প্রশাসকের লাইসেন্স। এতে সরকার প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।

সরেজমিনে উপজেলার অচিন্তপুর, বোকাইনগর, ডৌহাখলা ও রামগোপালপুর ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, ইট তৈরির জন্য ত্রিফসলি জমির উপরিভাগের মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। অনেক স্থানে ফসলি জমি খুঁড়ে বড় বড় পুকুর তৈরি করা হচ্ছে। এছাড়া গ্রামীণ সড়ক দিয়ে ভারী ড্রাম ট্রাকে মাটি ও ইট পরিবহনের ফলে রাস্তাঘাট ভেঙে যাচ্ছে। রাস্তায় পড়ে থাকা মাটি কুয়াশায় পিচ্ছিল হয়ে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় ফলদ ও বনজ গাছপালা মরে যাচ্ছে এবং ফসল পুড়ে যাচ্ছে। এছাড়া সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা।

পরিবেশ অধিদপ্তর ময়মনসিংহ বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাবিকুন্নাহার জানান, "গৌরীপুরের কোনো ইটভাটারই বৈধ লাইসেন্স নেই। অর্থাৎ এ উপজেলায় পরিচালিত সবকটি ইটভাটায় অবৈধ।"

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফার ইয়াসমিন জলি বলেন, "ফসলি জমির প্রাণ হলো উপরের ৮-১০ ইঞ্চির টপ সয়েল। এখানেই জৈব পদার্থ থাকে। এটি কেটে নিলে জমি চিরস্থায়ীভাবে উর্বরাশক্তি হারিয়ে ফেলে, যা খাদ্য নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি।"

তালিকানুযায়ী উপজেলায় ইকো ব্রিকস, এসএস ব্রিকস, শাফায়েত ব্রিকস, এনজিএম ব্রিকস, শামছু ব্রিকস, মাইসা ব্রিকস, আয়েশা ব্রিকস, এসএইচবি ব্রিকস, মদিনা ব্রিকস, জননী ব্রিকস, খান ব্রিকস, বিআরবি, একতা ব্রিকস, চাচা-ভাতিজা ব্রিকস, মেসার্স তাজ ব্রিকস, বিসমিল্লাহ ব্রিকস, তানিয়া ব্রিকস ও শাপলা ব্রিকসসহ অন্তত ১৮টি ভাটা অবৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফিয়া আমীন পাপ্পা জানান, "জমির টপ সয়েল কেটে নেওয়ার অভিযোগ পেয়ে সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। অবৈধ ইটভাটা বন্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী শীঘ্রই অভিযান পরিচালনা করা হবে।" তিনি আরও জানান, প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ভাটা চলছে এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন।