Image description

ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে বিশ্ব বরেণ্য বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের জন্মভিটার ভবনটি। ভবনটির ভিতরে প্রবেশ করতেই গায়ের লোম শিউরে ওঠে, যেন চারপাশে তার বোবা কান্না বাতাসে ভেসে আসে কানে। ইট পাথরের এই ভবনটির চারিদিকে ইট বালু সবকিছু খসে খসে পড়ছে। বিশ্ব বরেণ্য বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের এই জন্মভিটা আধুনিকায়ন ও সংস্কার করা এখন সময়ের দাবি।

খুলনার পাইকগাছা উপজেলার রাড়ুলী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বিশ্বের স্বীকৃত এক মহান বিজ্ঞানী, রসায়নবিদ ও শিক্ষাবিদ আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়। ১৮৬১ সালের ২ আগস্ট কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী রাড়ুলী গ্রামে জন্মগ্রহণ করা এই গুণী মানুষটি শুধু বাংলাদেশ বা ভারত নয়, বিশ্ব বিজ্ঞান ও শিল্পায়নের ইতিহাসে অমর।

কিন্তু আজ সেই জন্মভিটা, যেখানে একসময় দেশের ও দেশের বাইরের দর্শনার্থীরা তাঁর প্রতিভা ও গুণের স্বাক্ষী হতে ভিড় করত, এখন পরিত্যক্ত, জরাজীর্ণ এবং ধ্বংসের মুখে। ছাদ ঝুঁকিপূর্ণ, দেয়াল ফাটলসহ ছিন্নমুণ্ডা অবস্থায়, ইতিহাসের এই অমুল্য স্মৃতি যেন দিনে দিনে মাটির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে।

স্থানীয়রা বলছেন, গুণী মানুষের কদর না করলে সেখানে আর গুণী জন্মায় না। পিসি রায় আমাদের গর্ব। তাঁর জন্মভিটা সারা বিশ্বের সামনে তুলে ধরার দায়িত্ব আমাদের। পাইকগাছা সরকারি কলেজের ভূগোল বিভাগের প্রভাষক মো. মোমিন উদ্দীন এ কথা বলেন।

আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় ছিলেন বেঙ্গল কেমিক্যালসের প্রতিষ্ঠাতা এবং মার্কারি (I) নাইট্রেটের আবিষ্কারক। তিনি দেশের প্রথম শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন এবং দেশি শিল্পায়নের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী অবদান রাখেন। তিনি শুধু বিজ্ঞানীই ছিলেন না, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক এবং মানবিক মানুষ হিসেবেও বিশ্বখ্যাত।

স্থানীয় অমিত দেবনাথ বলেন, স্মৃতিচিহ্নটি সংরক্ষণ করে পর্যটন কেন্দ্রে রূপান্তর করা হলে পাইকগাছার অর্থনীতি ও পর্যটন সম্ভাবনা বিপুলভাবে বৃদ্ধি পাবে। এটি শুধু স্থানীয় নয়, জাতীয় গর্বের বিষয়।

দর্শনার্থী রিয়াদ মাহমুদ (নড়াইল, যশোর) জানান, বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানীর বাড়ি দেখতে এসেছি। কিন্তু এটি এত পরিত্যক্ত এবং ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়। সংস্কার হলে এটি সত্যিকারের দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠবে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা এফ.এম. অজিয়ার রহমান বলেন, পিসি রায় ছিলেন এক অসাধারণ মানবিক গুণের অধিকারী। তিনি নিজেই বিদেশি অতিথিদের সাহায্য করতেন। এমন মহান মানুষের স্মৃতি সংরক্ষণ আমাদের কর্তব্য।

বর্তমানে শুধু সদর মহল কিছুটা সংস্কার করা হয়েছে। অন্দর মহল, ছাদ, পিলার, দরজা-জানালা প্রায় ধ্বংসপ্রায়। কেয়ারটেকার তপন কুমার দত্ত জানান, দেশ-বিদেশ থেকে অনেক পর্যটক এই বাড়ি দেখার জন্য আসেন, তবে কার্যকর সংস্কারের জন্য বড় বাজেট প্রয়োজন।

পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহেরা নাজনীন বলেন, এই জন্মভিটা প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। সুন্দরবন ভ্রমণের পথে অনেক পর্যটক এদের দেখতে আসেন। যদি এটি আধুনিকায়ন ও সংস্কার করা যায়, এটি স্থানীয় অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

স্থানীয়রা সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে আহ্বান জানাচ্ছেন, যেন দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। কারণ, ইতিহাসের এই অমুল্য স্মৃতি হারালে তা শুধুই পাইকগাছার নয়, গোটা দেশের জন্য ক্ষতির বিষয় হবে।

আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের জন্মভিটা শুধুই একটি পুরোনো বাড়ি নয়, এটি মানবিক ও বৈজ্ঞানিক প্রতিভার প্রতীক, যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে অনুপ্রেরণা যোগাবে। তার স্মৃতি সংরক্ষণ করা আমাদের দায়িত্ব।