Image description

তিন চাকার অটোরিকশা, সিএনজি। দাপিয়ে চলছে মহাসড়কে। মানছে না কোন বিধিনিষেধ। নেই কোন আইনের প্রয়োগ। মহাসড়কে ব্যস্ততম ষ্টেশন গুলোতেও নেই ট্রাফিক পুলিশ। ফলে স্বাধীন ভাবে চলছে অটোরিকশা সিএনজি।  উল্টো পথে চলার কারণে প্রায়ই ঘটে চলেছে নানা দূর্ঘটনা। আহত বা নিহতেরও ঘটনা ঘটেছে। 

দূরপাল্লার যানবাহনের সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে এই তিন চাকার ব্যাটারি চালিত রিকশা, অটোরিকশা। মহাসড়কে যানজট সৃষ্টিতে অটোরিকশার ভূমিকা কম নয়। সড়কে বর্তমানে হাইওয়ে পুলিশের তদারকির অভাবে আরো বেপরোয়া হয়ে পড়েছে এই সব যানবাহন । এ সব অটোরিকশা মানছে না কোন বিধিনিষেধ, না আইনের তোয়াক্কা। লোকাল লেন, মাঝের লেনে ভারী যানবাহনের সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে। ফলে প্রায়ই ঘটে চলেছে নানা দূর্ঘটনা। অনেকেই পঙ্গুত্বও বরন করছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা আরিচা মহাসড়কের ধামরাইয়ের ইসলামপুর থেকে বারবারিয়া কোন জায়গায় বাদ নেই তিন চাকার অটোরিকশা চলাচল। হাইওয়ে পুলিশের তদারকি থাকলেও প্রতিটি স্টেশনে নেই ট্রাফিক পুলিশ। ৫ আগষ্টের পূর্বে মাঝে মধ্যেই মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশ অটোরিকশা জব্দ করতো। করতেন জরিমানাও। তখন মহাসড়কে অটোরিকশা নিয়ে উঠতে আতঙ্কে থাকতেন চালকরা। পুলিশের হাতে ধরা পড়লেই গুনতে হতো ২ হাজার ৬ শত টাকা। কিন্তু ৫ আগষ্টের পর থেকে তেমন কোন তদারকি বা সড়কে টহল না থাকায় ইচ্ছে মতো এই সব অটোরিকশা নিজেদের স্বাধীন মতো চলাচল করছে।  মনে হয় দূরপাল্লার ভারী যানবাহনের সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে। এতে যাত্রীরাও থাকেন আতঙ্কে। ব্যস্ততম সড়কে অবৈধ এই যানবাহন গুলো চলাচল করছে স্বাচ্ছন্দ্যে। নেই কোন বাধা। 

উপজেলার কয়েকটি ব্যস্ততম বাসস্ট্যান্ড ইসলামপুর, থানা রোড, ঢুলিভিটা, জয়পুরা, কালামপুর, বাথুলি, বারবারিয়া সব জায়গায়ই শত শত অটোরিকশা। এরা মহাসড়কের উপর দিয়ে দাপিয়ে চলছে। অটোরিকশা, সিএনজির উপর কোন আইন প্রয়োগ না করায় যত্রতত্র চলছে মহাসড়কের উপর দিয়ে। এই সব যানবাহনের চালকদের নেই কোন প্রশিক্ষণ। আয় বেশি হওয়ায় মন চাইলেই অটোরিকশা, সিএনজি নিয়ে বেরিয়ে পরে মহাসড়কে। মহাসড়কের পাশাপাশি আন্চলিক সড়কেও রিকশা, অটোরিকশা ও সিএনজির চাপ কম নেই। এর আগে কালামপুর সাটুরিয়া আন্চলিক সড়কে একাধিক দূর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। 

"নিরাপদ সড়ক চাই" ধামরাই উপজেলা শাখা সূত্রে জানা যায়, অক্টোবর-২০২৪ থেকে অক্টোবর -২০২৫ পর্যন্ত এই এক বছরে ধামরাই অংশে মোট মোট থ্রি হুইলার দুর্ঘটনা ঘটেছে ১৫৭ টি। এতে মোট আহত হয়েছে ২২০-২৩০ জন। এর মধ্যে অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ এবং মারাও গেছেন। মহাসড়কের সাথে পাল্লা দিয়ে আঞ্চলিক সড়কেও ঘটছে দূর্ঘটনা।

দূরপাল্লা গাড়ির চালক ওবায়দুর বলেন, সিএনজি অটোরিকশাগুলো আঞ্চলিক সড়কে চললে কোন সমস্যা নাই। এরা মহাসড়কে উঠার কারণে আমরা ঠিক মতো গাড়ি চালাতে পারি না। টাইমিং হেরফের হয়। ফলে দূর্ঘটনাও ঘটে।

তবে অটোরিকশা চালক মোনায়েম বলেন, মহাসড়কে গাড়ি চালানো ঠিক না। কিন্তু যাত্রীদের জন্য আমাদের আসতে হয়। অপরদিকে অনেক দূর ইউটার্ণ ঘুরে আসতে হয় বলে আমরা সড়কের মাঝেই যাত্রী উঠানামা করে থাকি। তবে এটি ঠিক নয়।

কামাল আহমেদ নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, মহাসড়কে অটোরিকশা সিএনজি চলাচল খুবই ভয়ানক। প্রায়ই দূর্ঘটনা ঘটে। বিশেষ করে অদক্ষ চালক রিকশা, অটোরিকশা চালায়। তাদের নেই কোন প্রশিক্ষন। আগে মহাসড়কে অটোরিকশা উঠলেই জরিমানা করা হতো।এতে কোন লাভই হতো না। আবার পুলিশ চলে গেলে অটোরিকশা নিয়ে মহাসড়কে উঠে যায়। তাই জরিমানা না করে সঠিক আইনের আওতায় আনা হোক। তাছাড়া একে বারে মহাসড়কে অটোরিকশা চালানো বন্ধ করে দেওয়া উচিত। কোন জরিমানা নয়, অটোরিকশা উঠাই বন্ধ। হাইওয়ে পুলিশের তদারকি জোরদার করা উচিত।

হাসমত নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, মহাসড়কে অটোরিকশা সিএনজি চলাচল একদম বন্ধ করে দেওয়া উচিত। অদক্ষ চালক অটোরিকশা চালায়। এদের ধৈর্য খুবই কম। ভারী যানবাহনের সাথে মনে হয় প্রতিযোগিতায় নামে। এতে সময় নষ্ট হয়। পুলিশ আগে জরিমানা করতো। জরিমানা করে কখনো মহাসড়কে অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করা যাবে না। দুর্ঘটনা ঘটবেই। কারণ একদিন জরিমানা দিয়েই মহাসড়কে অটোরিকশা উঠানো বন্ধ হবে না। আইনের কঠোরতা প্রয়োগ করতে হবে। বর্তমানে চাকরি চলে যাওয়ায় অনেকেই অটোরিকশা নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পরে। এদের গাড়ি চালানোর নেই অভিজ্ঞতা, নেই কোন ধৈর্য। 

সোহেল নামে এক পথচারী বলেন, সড়কে অটোরিকশায় উঠলেই ভয়ে থাকি। কখন বড় গাড়ির সাথে ধাক্কা লেগে যায়। হাইওয়ে পুলিশের জোরদার তদারকি করতে হবে। সেই সাথে একেবারে বন্ধ করে দিতে হবে মহাসড়কে অটোরিকশা উঠা। জরিমানা করে রিকশা অটোরিকশা ছেড়ে দিলে চালকদের একটা বদ অভ্যাসে পরিণত হবে। কারণ তারা মহাসড়কে অটোরিকশা চালিয়েই জরিমানার টাকা তুলে নেয়। তাই মহাসড়কের উপর অটোরিকশা উঠা বন্ধ করতে হবে। এটা না করতে পারলে দূর্ঘটনা বন্ধ হবে না।

এ বিষয়ে নিরাপদ সড়ক চাই ধামরাই উপজেলা শাখার সভাপতি এম.নাহিদ মিয়া বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা বর্তমানে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে অনেক কারনের মধ্য হচ্ছে ৩ চাকার ছোট গাড়ি বা ধীর গতির যানবাহন মহাসড়কে চলাচল করার ফলে। দুর্ঘটনা রোধে করনীয় বিষয়ে হাইওয়ে পুলিশ নজর দারি বৃদ্ধি করতে হবে এবং প্রয়োজনে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সড়ক পরিবহন ২০১৮ আইনে মামলা করা যেতে পারে। পাশাপাশি এ সমস্যার সমাধানের জন্য অবশ্যই গ্যারেজ মালিক ও থ্রী হুইলার চালকদের সাথে মতবিনিময় করা হলে তাদের সচেতন করা যেতে পারে। অটোরিকশা চালকদের  আইনের আওতায় আনা হলে তাদের মহাসড়কে অটোরিকশা বা ধীর গতির ছোট যানবাহন চলাচল বন্ধ হবে।

সিএনজি অটোরিকশা চালকদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে চালকদের নিয়ে নানা ধরনের প্রোগ্রাম করে যাচ্ছেন বলে জানান গোলড়া হাইওয়ে পুলিশের (ওসি) দেওয়ান কউসিক আহম্মেদ। 

তিনি আরো বলেন, দুর্ঘটনা কমিয়ে আনাতে সব সময় অটোরিকশা চালকদের পরামর্শের পাশাপাশি মহাসড়কে উঠার সাথে সাথেই মামলা দিচ্ছি জরিমানা করা হচ্ছে। কিন্তু জরিমানার আওতায় আনার পর আবারও তারা মহাসড়কে অটোরিকশা নিয়ে যাত্রী বহণ করছেন। আমি তিন মাস ধরে গোলড়া হাইওয়ে থানায় এসেছি। এই তিন মাসে প্রায় ১২ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে তিন চাকার অটোরিকশা সিএনজি চালকদের। আমরা সব সময় মহাসড়কে নিরাপদ নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে তার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। অটোরিকশা সিএনজি চালকরা অদক্ষ থাকার কারনে দূর্ঘটনা ঘটছে। সচেতনতা বাড়াতে আমাদের কাজ চলমান।