বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীরের শাহাদাতবার্ষিকীতে আয়োজনহীন নিজ উপজেলা
বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের শাহাদাতবার্ষিকীতে বরিশালের বাবুগঞ্জে প্রশাসন কিংবা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকে কোনো আয়োজন না হওয়ায় ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীরের ছোট ভাই মঞ্জুর রহমান। তাঁর নামে প্রতিষ্ঠিত দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দোয়া-মোনাজাতের মাধ্যমে ৫৪তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে।
বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের ছোট ভাই বলেন, “স্বাধীনতার পর প্রথম কয়েক বছর তার জন্মভূমি বাবুগঞ্জে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দোয়া ও স্মরণসভা আয়োজন করা হতো। কিন্তু এখন সেই উদ্যোগ আর দেখা যায় না। বিষয়টি আমাদের জন্য অত্যন্ত কষ্টের।”
“তবে এই বীর সেনানীর শহীদ হওয়ার স্থান চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়, যা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।”
১৯৪৯ সালের ৭ মার্চ বাবুগঞ্জ উপজেলার রহিমগঞ্জ গ্রামে জন্ম নেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর। তিনি ওই গ্রামের মৌলভী আব্দুল মোতালেব হাওলাদারের সন্তান।
১৯৬৭ সালে মহিউদ্দিন পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে (কাকুলে) জেন্টলম্যান ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেন। পরে তিনি পশ্চিম পাকিস্তানের ১৭৩ ব্যাটালিয়ন ইঞ্জিনিয়ারিং কোরে ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর ১৯৭১ সালের জুলাই মাসে আরও চার সেনা কর্মকর্তাকে নিয়ে ব্যাটালিয়ন থেকে পালিয়ে আসেন তিনি। বাংলাদেশে এসে মেজর জেনারেল ওসমানীর সঙ্গে দেখা করলে তিনি তাকে ৭ নম্বর সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্ব দেন।
দায়িত্ব পেয়ে ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর চাঁপাইনবাবগঞ্জে যুদ্ধ করেন। ১৪ ডিসেম্বর ভোরে মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর ও তার সহযোদ্ধারা চাঁপাইনবাবগঞ্জের রেহাইচরের মধ্য দিয়ে মহানন্দা নদী পার হয়।
তারা তখন অতর্কিত হামলা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর তিনটি ট্রেঞ্চ দখল করে নেন। চতুর্থটি দখল করার সময় শত্রুপক্ষের একটি গুলি গিয়ে মহিউদ্দিনের মাথায় বিদ্ধ হলে। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
বিজয়ের প্রাক্কালে প্রাণ হারানো বীর যোদ্ধাকে পরদিন ১৫ ডিসেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনা মসজিদ এলাকায় দাফন করা হয়। পরে মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য তাকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করে বাংলাদেশ সরকার।
বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. ইব্রাহিম খান বলেন, “জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ ও নিয়মিত কর্মসূচি গ্রহণ করা প্রয়োজন। বিশেষ করে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের মতো মহান মুক্তিযোদ্ধার জন্মভূমিতে তার স্মরণে আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি না থাকা দুঃখজনক।”
তবে তাদের প্রতিষ্ঠানের নিজ উদ্যোগে কলেজ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পৃথকভাবে দোয়া মোনাজাত ও আলোচনা সভা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মবর্তা আসমা-উল হুসনা গণমাধ্যমকে বলেন, “এ উপজেলায় আমি নতুন। ফলে বিষয়টি আমার জানা ছিল না। জানতে পারলে অবশ্যই যথাযথ মর্যাদায় উনার মৃত্যুবার্ষিকীর আয়োজন করা হতো।”




Comments