Image description

দেশের ‘টি ক্যাপিটাল’ খ্যাত মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য, চায়ের সুগন্ধ, পাহাড়ি সবুজ আর বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির অপূর্ব মিশেলে সবসময়ই পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়। বিশ্ব পর্যটন দিবস-২০২৫ উপলক্ষে গত শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) এই শহর যেন পরিণত হয়েছিল এক জীবন্ত উৎসবের কেন্দ্রবিন্দুতে। রঙিন র‌্যালি, ঐতিহ্যবাহী নৃত্য, বৃক্ষরোপণ, আর টেকসই পর্যটনের অঙ্গীকারে মুখরিত ছিল পুরো শ্রীমঙ্গল।

বর্ণাঢ্য র‌্যালিতে টেকসই পর্যটনের প্রত্যয়

সকালে রাধানগরের গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্টের সামনে থেকে শুরু হয় এক বর্ণাঢ্য র‌্যালি। রঙ-বেরঙের ব্যানার, ফেস্টুন আর “টেকসই উন্নয়নে পর্যটন” স্লোগানে মুখরিত ছিল পুরো আয়োজন। র‌্যালির উদ্বোধন করেন ট্যুরিস্ট পুলিশের শ্রীমঙ্গল জোনের অফিসার ইনচার্জ কামরুল হাসান চৌধুরী।

পর্যটন কল্যাণ পরিষদের সভাপতি কুমকুম হাবিবা তাঁর শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন, “পর্যটন শুধু অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে সংস্কৃতি ও পরিবেশের টেকসই উন্নয়ন। সঠিক পরিকল্পনা ছাড়া পর্যটনের প্রকৃত সম্ভাবনা কাজে লাগানো সম্ভব নয়।”

রাধানগরের পথ ধরে অগ্রসর হওয়া র‌্যালিতে স্কুল শিক্ষার্থী, চা-শ্রমিক, খাসিয়া ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা তাঁদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকে অংশ নেন। হাতে চা-পাতা, লেবু, আনারস ও সাতকড়ার ডালা নিয়ে শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস র‌্যালিকে দিয়েছিল নতুন প্রাণ। হোটেল, রিসোর্ট, ট্যুর অপারেটর, ট্যুর গাইড, স্যুভেনির শপের প্রতিনিধি এবং গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতি পুরো আয়োজনকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলেছিল।

ঐতিহ্যবাহী নৃত্যে মুগ্ধ শ্রীমঙ্গল

র‌্যালি শেষে প্যারাগন হোটেলের সামনে এসে থামে। এরপর শুরু হয় সিলেটের ঐতিহ্যবাহী ধামাইল নৃত্য। নারী-পুরুষ হাত ধরাধরি করে তালে তালে নেচেছেন, যা উপস্থিত সবাইকে মুগ্ধ করে। এর সঙ্গে যোগ হয় ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী নৃত্য। ঢাক, মাদল আর করতালের সুরে নৃত্যের তালে তালে শ্রীমঙ্গল যেন এক উৎসবমুখর মঞ্চে পরিণত হয়।

বৃক্ষরোপণে টেকসই পর্যটনের বার্তা

র‌্যালির মাঝপথে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করা হয়, যা ছিল টেকসই পর্যটনের প্রতীকী বার্তা। এই উদ্যোগের মাধ্যমে পরিবেশ সংরক্ষণের প্রতি শ্রীমঙ্গলের অঙ্গীকার আরও জোরালোভাবে প্রকাশ পায়।

শ্রীমঙ্গলের সম্পদ সংরক্ষণে প্রতিশ্রুতি

সমাপনী বক্তব্যে পর্যটন কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তারেকুর রহমান পাপ্পু বলেন, “শ্রীমঙ্গলের প্রকৃতি, সংস্কৃতি আর আতিথেয়তা আমাদের অনন্য সম্পদ। এগুলো সংরক্ষণের মাধ্যমে টেকসইভাবে পর্যটন বিকশিত করতে পারলে শুধু অর্থনীতিই নয়, আমাদের সংস্কৃতিও আরও সমৃদ্ধ হবে।”

বিশ্ব পর্যটন দিবসে শ্রীমঙ্গলের আকাশে-বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছিল নাচ, গান, সংস্কৃতি আর টেকসই উন্নয়নের প্রত্যয়। এই উৎসবমুখর আয়োজন শ্রীমঙ্গলকে আরও একবার প্রমাণ করল পর্যটনের এক অপূর্ব গন্তব্য হিসেবে।