কলাপাড়ায় আইনজীবীকে কুপিয়ে হত্যা চেষ্টা ঘটনার ২৩ দিনেও গ্রফতার হয়নি কেউ

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় এক আইনজীবীকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনার ২৩ দিন পেরিয়ে গেলেও অভিযুক্ত সন্ত্রাসীদের কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনায় কলাপাড়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে কর্মরত আইনজীবীরা পুলিশের নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করেছেন। আইনজীবী নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, অজ্ঞাত কারণে পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতারে উদাসীন। এ অবস্থায় আসামিদের গ্রেফতারের দাবিতে আইনজীবী সমিতি শিগগিরই কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারে বলে জানিয়েছেন কলাপাড়া চৌকি আদালত আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার নাসির উদ্দিন। অন্যদিকে, পুলিশ দাবি করছে, আসামিদের গ্রেফতারে তাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
সূত্রের খবর, গত ১৮ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কুয়াকাটা জিরো পয়েন্টের পশ্চিম পাশে জমি-জায়গা ও মাছের ঘের নিয়ে বিরোধের জেরে পূর্বপরিকল্পিতভাবে আইনজীবী আনোয়ারের ওপর হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে এবং লোহার রড ও হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে তাকে গুরুতর আহত করে। এতে আনোয়ারের বাম চোখ, কপালসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর কাটা জখম হয়। ঘটনার পর তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। বর্তমানে আনোয়ার কিছুটা সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছেন।
ঘটনার পর মামলা নিতে পুলিশের গড়িমসি করার অভিযোগ উঠেছে। আইনজীবী সমিতির কঠোর অবস্থানের পর ঘটনার পাঁচ দিন পর মহিপুর থানা পুলিশ মামলা রেকর্ড করে। তবে এখনো কোনো আসামি গ্রেফতার না হওয়ায় আইনজীবী সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
কলাপাড়া চৌকি আদালত আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট খন্দকার নাসির উদ্দিন বলেন, “একজন আইনজীবীর ওপর নৃশংস হামলার ঘটনায় জড়িতদের কোনোভাবেই পার পেতে দেওয়া যাবে না। অভিযুক্তদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে। প্রায় এক মাস পেরিয়ে গেলেও পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে না পারায় আমরা তাদের নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করছি।” তিনি আরও জানান, “পুলিশ যদি একজন আসামিকেও গ্রেফতার না করে, তবে আইনজীবী সমিতি থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।”
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মহিপুর থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, মামলার তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে এবং আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের টিম কাজ করছে। মহিপুর থানার ওসি মাহমুদ হাসান বলেন, “আসামিরা পলাতক থাকায় গ্রেফতারে কিছুটা সময় লাগছে। তবে তদন্তকারী কর্মকর্তা অভিযান অব্যাহত রেখেছেন।”
কলাপাড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সমির সরকার জানান, “আসামিদের গ্রেফতারের জন্য মহিপুর থানার ওসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্তে যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে, তাদের অবশ্যই গ্রেফতার করা হবে।”
আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দ এ ঘটনায় পুলিশের ভূমিকায় হতাশা প্রকাশ করেছেন। তারা মনে করছেন, পুলিশের উদাসীনতার কারণে আসামিরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। আইনজীবী সমিতি এ বিষয়ে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন।
এ ঘটনা এলাকায় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। স্থানীয়রা ও আইনজীবী সম্প্রদায় আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানিয়েছেন।
Comments