ময়মনসিংহে ইউনাইটেড সার্ভিসের বাসে গেজেটভুক্ত একজন জুলাইযোদ্ধাকে লাঞ্ছিত করার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও পরিবহন শ্রমিকদের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে ঢাকার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। একদিকে বৈষম্যবিরোধীরা অবস্থান নিয়ে মাসকান্দা বাসস্ট্যান্ডের ইউনাইটেডের কাউন্টারের সামনে অপরদিকে পরিবহন শ্রমিকরা শনিবার দুপুর ১২টা থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ বাইপাসে অবস্থান নিয়েছেন।

ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। ময়মনসিংহ থেকে ঢাকাগামী সব ধরনের যানচলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রীরা জানান, ময়মনসিংহ থেকে বাসগুলো বাইপাস দিয়ে ঢাকার দিকে যায়। ওখানে অবরোধ থাকায় বাস বের হতে পারছে না। আবার ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ, শেরপুর, নেত্রকোণা, জামালপুরগামী গাড়িগুলোও সেখানে গিয়ে আটকা পড়ছে। দীর্ঘ সময় ধরে আটকে থাকার কারণে, ঢাকা-ময়মনসিংহগামী মহাসড়কের ময়মনসিংহ অভিমুখে প্রায় সাত-আট কিলোমিটার যানজট তৈরি হয়েছে। যত সময় যাচ্ছে, গাড়গিুলো সেখানে গিয়ে লম্বা যানজট তৈরি করছে। ফলে দুপাশের যাত্রীরাই ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন। কেউ কেউ তিন-চার ঘণ্টা ধরে আটকে আছেন। কেউ বাস ছেড়ে বিকল্প পথে গন্তব্যে রওয়ানা হয়েছেন।

ময়মনসিংহ কোতোয়ালী থানার ওসি শিবিরুল ইসলাম বলেন, হালুয়াঘাটের জুলাইযোদ্ধা আবু রায়হান শুক্রবার রাতে বাসে ওঠার সময় বাস শ্রমিক ঝন্টুর শরীরে ধাক্কা লাগে। এ ঘটনায় নিজেকে জুলাইযোদ্ধা পরিচয় দিয়ে রায়হান একাধিক বার দুঃখপ্রকাশ করার পরেও ঝন্টু তার প্রতি অশালীন আচরণ ও কটুক্তি করে বাস থেকে নামিয়ে দেন।

এ ঘটনার প্রতিবাদে রাত ৯টা থেকে নগরীর বাসকান্দা ইউনাইটেড বাস কাউন্টারের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। ফলে ময়মনসিংহ-ঢাকাগামী ইউনাইটেড সার্ভিসের বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

শনিবার দুপুর পর্যন্ত দোষীদের বিচারসহ জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ সাগর হত্যা মামলার আসামি ও আওয়ামী লীগের জেলার সহসভাপতি আমিনুল হক শামীমকে গ্রেপ্তার ও তার মালিকানাধীন ইউনাইটেড সার্ভিসের সব বাস বন্ধে অনড় অবস্থানে রয়েছেন তারা। এই সার্ভিসে আমিনুল হক শামীমের ১৬টি বাস আছে।

বাসস্ট্যান্ডে অবস্থান নেওয়া জুলাই যোদ্ধাদের মধ্যে আছেন আবু রাইহান, মাসুদ রানা, মোজাম্মেল হক, মোকাররম আদনান।

ওসি শিবিরুল আরও বলেন, খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসক, সেনা সদস্যরা বাস টার্মিনালে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। এ ঘটনায় ঝন্টু নামে এক বাস শ্রমিককে আটক করেছে পুলিশ।

তিনি বলেন, সারারাত বিষয়টি সমাধানের জন্য চেষ্টা করেছি। কিন্তু দুপুরেও সমাধান না হওয়ায় শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ বাইপাসে সব ধরনের পরিবহন আটকে দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে।

ময়মনসিংহ জেলা মোটর মালিক সমিতির সভাপতি ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আলমগীর মাহমুদ আলম বলেন, ‘জুলাইযোদ্ধারা আমাদের সার্ভিসের কাউন্টার বন্ধ করে শ্রমিকদের আটকে রাখে। পরে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং সেনাসদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। তবে ছাত্ররা বাস চলাচল করতে না দেওয়ায় শ্রমিকরা অবরোধ করছে। বিষয়টি দেখছি কিভাবে সমাধান করা যায়।’