Image description

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল শহর ও আশপাশের এলাকায় চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে গেছে। গত কয়েক সপ্তাহে শহরের একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাসা-বাড়ি ও পথচারীরা চুরির শিকার হয়েছেন। এতে ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।


গতকাল গভীর রাতে শহরের হবিগঞ্জ রোডের দুটি এবং মৌলভীবাজার রোডের একটি বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটে। চোরেরা দোকানগুলোর তালা ও শাটার ভেঙে নগদ টাকা, মোবাইল ফোন ও বিভিন্ন মালামালসহ চার লক্ষাধিক টাকার মালামাল নিয়ে যায়। একই রাতে শহরতলীর উত্তর ভাড়াউড়া ও শহরের মাস্টারপাড়া এলাকার দুটি বাড়িতেও চুরি সংঘটিত হয়। এতে নগদ অর্ধলক্ষাধিক টাকা ও তিনটি মোবাইল ফোন চুরি হয়।


হবিগঞ্জ রোডের রহমান স্যানিটারি ওয়্যার-এর ম্যানেজার শাহিন মিয়া জানান, "গতরাতে চোরেরা দোকানের তালা ও শাটার ভেঙে দেড় লাখ টাকা নগদ এবং সাড়ে তিন লাখ টাকার মালামাল নিয়ে গেছে।" মৌলভীবাজার রোডের কাশেম স্টোরের স্বত্বাধিকারী আকিব আহমেদ জানান, "সকালে দোকানে এসে দেখি পাঁচটি তালা ভাঙা ও সিসি ক্যামেরা ভাঙচুর করা। নগদ ২৫ হাজার টাকা ও দেড় লাখ টাকার পণ্য চুরি গেছে।"


অন্যদিকে হবিগঞ্জ রোডের স্বপ্ন ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের কর্মচারী কৃষ্ণ উড়ান বলেন, "রাতে দোকানের বড় দুটি এসির পাইপ চুরি হয়েছে।"
শ্রীমঙ্গল সদর ইউনিয়নের উত্তর ভাড়াউড়া এলাকার সচেতন নাগরিক কমিটি ও টিআইবি শ্রীমঙ্গল শাখার সাবেক সভাপতি দ্বীপেন্দ্র ভট্টাচার্য জানান, "ভোর ৩টার দিকে আমার বাসায় চুরি হয়। চোরেরা আলমারির ড্রয়ার ভেঙে ৫০-৬০ হাজার টাকা ও তিনটি মোবাইল ফোন নিয়ে গেছে।"

তিনি অভিযোগ করেন, রাতে জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করলে পুলিশ জানায়, "ওই রাতে একাধিক চুরির ঘটনায় তারা ব্যস্ত।" তবে পরদিন দুপুর পর্যন্তও পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়নি।


এর আগে গত শুক্রবার রাতে শহরতলীর মণিপুরী রামনগর এলাকার শিক্ষক হাবিবুর রহমানের বাসায় চুরি হয়। চোরেরা রান্নাঘরের চিমনি দিয়ে প্রবেশ করে আলমারি ও শোকেস ভেঙে তিন ভরি স্বর্ণালংকার, ৪০ হাজার টাকা ও একটি ল্যাপটপ নিয়ে যায়। তিনি জানান, "১৫ অক্টোবর থানায় অভিযোগ দিলেও এখনও কোনো অগ্রগতি নেই।"


একই এলাকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিনের বাসায় গত ২৮ সেপ্টেম্বর চোরেরা তালা ভেঙে প্রবেশ করে পাঁচ ভরি স্বর্ণ, ১ লাখ ৬৪ হাজার টাকার আইফোন ১৬ প্রো ম্যাক্স ও ৩০ হাজার টাকা নিয়ে যায়। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগের পরও এখন পর্যন্ত কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।


গত ৫ অক্টোবর রাত ৯টার দিকে দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরার পথে ছিনতাইকারীদের হামলার শিকার হন দুই ব্যবসায়ী আফজল মিয়া ও ফয়সল মিয়া। ছিনতাইকারীরা তাঁদের ওপর ছুরিকাঘাত করে তিন লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়। এছাড়া চলতি মাসে শহর-শহরতলী থেকে বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চুরির ঘটনাও ঘটেছে।


ক্রমবর্ধমান এসব চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনায় ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক বিরাজ করছে। সচেতন মহল বলছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি রোধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।


এ বিষয়ে শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, "গত মাসের ছিনতাই মামলার আসামিকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। সাম্প্রতিক চুরির ঘটনাগুলোর তদন্ত চলছে। আশা করছি দ্রুত জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।"


জরুরি নম্বরে ফোন করে কাঙ্ক্ষিত সেবা না পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, "চুরির ঘটনা ঘটার পর ৯৯৯-এ ফোন করা হয়েছিল। আমরা অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছি।"


সহকারী পুলিশ সুপার (শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সার্কেল) মো. ওয়াহিদুজ্জামান রাজু বলেন, "আমি সদ্য যোগদান করেছি। থানায় জনবল সীমিত হলেও নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ কাজ করছে। চুরি-ছিনতাই বন্ধে রাতের টহল জোরদার করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুত চোরদের আইনের আওতায় আনা যাবে।"