লোহাগড়া ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রাথমিক তদন্তে সত্য প্রমাণিত
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ইউনুছ শেখের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং আদালত অবমাননার অভিযোগ প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আবু রিয়াদের স্বাক্ষরিত দুটি পৃথক তদন্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনগুলোতে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রথম তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ইউনুছ শেখের বিরুদ্ধে ৬৭ নং জয়পুর মৌজার জমি সংক্রান্ত জালজালিয়াতি এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তদন্ত করা হয়। তদন্তে দেখা যায়, তিনি ১৯৮৯ সালে চাকরিতে যোগদানের পর থেকে নড়াইলের বিভিন্ন মৌজায় একাধিক খতিয়ানভুক্ত জমি ক্রয় করেছেন। কিছু ক্ষেত্রে সঠিক আয়ের উৎসের প্রমাণ দিতে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং কর ফাঁকির অভিযোগ প্রাথমিকভাবে সত্য বলে প্রতীয়মান হয়েছে।
দ্বিতীয় তদন্ত প্রতিবেদনে লোহাগড়ার বাসিন্দা এম এম হাবিব নেওয়াজের দাখিল করা অভিযোগের ভিত্তিতে তথ্য উঠে এসেছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, ৮৮ নং চাড়াবাড়িয়া মৌজার একটি নামজারি মামলা (নং ৭২৪৮/২০২৪-২৫) এর প্রতিবেদনের বিনিময়ে ইউনুছ শেখ ১ লক্ষ টাকা ঘুষ দাবি করেন। অভিযোগকারী হাবিব নেওয়াজ তদন্তে জানান, ঘুষের অগ্রিম হিসেবে তাকে ১০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। তবুও ইউনুছ শেখ উর্ধতন কর্তৃপক্ষের আদেশ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন না করে ৩০.৫০ শতক জমির প্রতিবেদন দেন, যা আদালতের আদেশের পরিপন্থী।
তদন্তকারী ইউএনও মো. আবু রিয়াদ প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, ইউনুছ শেখ আদালতের আদেশ যথাযথভাবে প্রতিপালন করেননি, যা আদালত অবমাননার শামিল। তাছাড়া ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ অস্বীকার করলেও বাস্তব প্রেক্ষাপটে তার অনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রতীয়মান হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, তিনি সরকারি স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেননি, বরং ইচ্ছাকৃতভাবে জমির প্রতিবেদনে হেরফের করেছেন।
দুটি তদন্ত প্রতিবেদনেই উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপিল বিধিমালা ২০১৮ অনুযায়ী ইউনুছ শেখের বিরুদ্ধে বিধানিক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছেন। উল্লেখ্য, মো. ইউনুছ শেখ ১৯৮৯ সালে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন এবং দীর্ঘদিন লোহাগড়া উপজেলায় ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে, এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছে।




Comments