Image description

জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী ধনী দেশগুলোর জবাবদিহিতা, ক্ষতিপূরণ ও ন্যায্যতা নিশ্চিতের দাবিতে রাজধানীতে শুরু হয়েছে তৃতীয় জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ–২০২৫। শনিবার শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই দিনব্যাপী এই সমাবেশের উদ্বোধন করা হয়।

নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা)–এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে সরকারি প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক জলবায়ু আন্দোলনের কর্মী, গবেষক এবং জলবায়ু-ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিসহ প্রায় দুই হাজার মানুষ অংশ নেন। বক্তারা জলবায়ু বিষয়ে বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতি ও বাস্তব বাস্তবায়নের মধ্যকার বড় ধরনের ব্যবধান নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সমাজকল্যাণ এবং নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমিন এস. মুরশিদ বলেন, বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণে সবচেয়ে কম দায় থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম বড় ভুক্তভোগী দেশ। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের ফ্রন্টলাইন দেশ। অথচ গ্লোবাল নর্থের দেশগুলোর বিলম্বের কারণে দরিদ্র দেশগুলোই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা তাদের কাছে ঋণী নই-বরং তারা আমাদের কাছে ঋণী। জলবায়ু ন্যায্যতা এখন জবাবদিহি ও কার্যকর পদক্ষেপের প্রশ্ন।”

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনকে আর কেবল প্রযুক্তিগত বা অর্থনৈতিক সমস্যা হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। “জলবায়ু ন্যায্যতা মানে ন্যায়, টিকে থাকা এবং জবাবদিহি,” বলেন তিনি।

জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমানোর আহ্বান জানিয়ে ফরিদা আখতার বলেন, প্যারিস জলবায়ু চুক্তিসহ বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নে এখনও বড় ঘাটতি রয়েছে। নারী, আদিবাসী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সব সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করার ওপরও তিনি জোর দেন।

উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ধরা’র সদস্য সচিব শরীফ জামিল। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং।

শরীফ জামিল বলেন, জলবায়ু ন্যায্যতা বাংলাদেশের জন্য শুধু দাবি নয়, এটি টিকে থাকার প্রশ্ন। তিনি বলেন, “নিজেদের ঘর থেকে ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে না পারলে বৈশ্বিক পর্যায়ে ন্যায্যতার দাবি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।”

সমাবেশে আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিরাও বক্তব্য দেন। এশিয়ান পিপলস মুভমেন্ট অন ডেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এপিএমডিডি)–এর সমন্বয়ক লিডি ন্যাকপিল জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে দ্রুত সরে আসা এবং জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য জোরালো বৈশ্বিক সহায়তার আহ্বান জানান।

ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ–এর প্রধান নির্বাহী আসাদ রেহমান বলেন, যে সংকট দরিদ্র দেশগুলো সৃষ্টি করেনি, তার দায় তাদের ওপর চাপানো অন্যায়। তিনি বলেন, ঋণ ও সুদের মাধ্যমে এখনও গ্লোবাল সাউথ থেকে গ্লোবাল নর্থে বিপুল অর্থ প্রবাহিত হচ্ছে।

টারা ক্লাইমেট ফাউন্ডেশন–এর ডেপুটি রিজিওনাল প্রোগ্রাম ডিরেক্টর সাইনান হটন বলেন, উন্নয়নের নামে দূষণ মেনে নেওয়ার সময় শেষ। নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে ন্যায়ভিত্তিক ও টেকসই বিকল্প হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ইতোমধ্যে বাংলাদেশের কৃষি, মৎস্য, খাদ্য নিরাপত্তা ও জীবিকায় মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। তারা নদী দখল, পরিবেশ অব্যবস্থাপনা ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস নিয়েও উদ্বেগ জানান। পাশাপাশি কপ–২৯–এ জলবায়ু অর্থায়নে প্রত্যাশিত অগ্রগতি না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন।

সমাবেশের আগে এক হাজারের বেশি দেশি-বিদেশি জলবায়ু কর্মী একটি র‍্যালিতে অংশ নেন। শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে আগারগাঁও হয়ে র‍্যালিটি সম্মেলনস্থলে গিয়ে শেষ হয়।

রোববার সমাবেশের দ্বিতীয় দিনে বিভিন্ন থিমেটিক সেশন, কর্মশালা ও নেটওয়ার্কিং আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। বিকেল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে “মিট দ্য প্রেস”।