Image description

কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন কার্যালয়ের নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদে সিভিল সার্জন অফিস "ঘেরাও কর্মসূচি" পালন করেছে কুষ্টিয়ার সকল ছাত্র-জনতা। রবিবার (২৬ অক্টোবর) বেলা ১১টার সময় সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান করে এ ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে ছাত্র জনতা।

এখানে প্রথমে সমাবেশ করে তারা বিভিন্ন স্লোগান দেন। পরে সকল ছাত্র-জনতা বেলা সাড়ে ১১টার সময় সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সামনে কুষ্টিয়া শহরের ব্যস্ততম সড়ক মজমপুরগেট হতে বড়বাজার এনএস রোড অবরোধ করে রাখে। 

অবরোধকালীন সময়ে বক্তব্য দেন, কুষ্টিয়া জেলা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব মোস্তফিজুর রহমান, ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশের (আপ বাংলাদেশ) কেন্দ্রীয় সদস্য সুলতান মারুফ তালহা, এনসিপি নেতা রাসেল আহম্মেদ, কুষ্টিয়া জেলা ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশের (আপ বাংলাদেশ) আহ্বায়ক শাহীনুর রহমান রিকু, কুষ্টিয়া শহর ছাত্রশিবিরের সাবেক সহসভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান পলাশ, দৈনিক কুষ্টিয়া পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক আলী মুজাহিদ, এনসিপি শ্রমিক উইং নেতা আল আমিন, সাধারণ শিক্ষার্থী পারভেজ প্রমুখ। 

এ সময় বক্তারা তিন দফা দাবী তুলে ধরে বলেন, এই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস ও আর্থিক দুর্নীতির সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত সকলকে চিহ্নিত করে অবিলম্বে স্থায়ী বহিষ্কার ও দৃষ্টান্তমূলক কঠোর শাস্তি প্রদান করতে হবে। দুর্নীতির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এই বিতর্কিত নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল ঘোষণা করে, নতুন করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ এবং দ্রুততম সময়ে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতার ভিত্তিতে পুনরায় পরীক্ষা আয়োজন করতে হবে। এরপর কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন এবং জেলা প্রশাসনের কোন কর্মকর্তা সমাবেশ ও অবরোধস্থলে না আসলে সকল ছাত্র-জনতা সিভিল সার্জনের মূল কার্যালয় ঘেরাও করেন এবং সেখানে সিভিল সার্জনের পদত্যাগ ও নিয়োগ পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগানে মুখরিত করে তোলেন। 

এ সময় কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ফয়সাল মাহমুদ ঘটনাস্থলে আসেন। পরে তিনি কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন ডা. শেখ মোহাম্মদ কামাল হোসেনকে সাথে করে ছাত্র জনতার সামনে নিয়ে আসেন। এ সময় সিভিল সার্জন ডা. শেখ মোহাম্মদ কামাল হোসেন সকল ছাত্র-জনতার উদ্দেশ্য করে বলেন, শূন্যপদে জনবল নিয়োগের কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট কমিটির ২৫ অক্টোবর তারিখে অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্তক্রমে অনিবার্য কারণবশত সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি যে সিদ্ধান্ত নিবে তা পরে জানানো হবে। তার বক্তব্যের পর ছাত্র জনতা এই নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল, তদন্ত কমিটি গঠন এবং এসব কর্মকাণ্ডের সাথে যারা জড়িত সকলের শাস্তির ব্যবস্থা করার দাবি জানান। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এসব ব্যবস্থা না করলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন ছাত্রজনতা। 

 উল্লেখ্য, গত শুক্রবার কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সাতটি পদের ১১৫টি শূন্য পদে নিয়োগ পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১৬ হাজার ৭৮৯ জন। এর মধ্যে ৫০ ভাগের কিছু বেশি পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু পরীক্ষার আগেই রাত থেকেই কুষ্টিয়া শহরের একটি বাসায় ২৫ থেকে ৩০ জন শিক্ষার্থীর রহস্যজনক প্রবেশ ও পরীক্ষার আগমুহূর্তে বের হওয়ার দৃশ্যে বিতর্কের জন্ম দেয়। গুঞ্জন শুরু হয় তাদের একত্রে নিয়ে পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের উত্তর মুখস্থ করানো হয়েছে। বিতর্কের পালে আরও হাওয়া লাগে, যখন আলোচনায় আসে চাকরিপ্রার্থীরা যে বাসা থেকে বের হয়েছেন, সেটি ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. হোসেন ইমামের। নিয়োগের লিখিত পরীক্ষার দিন একটি বাসা থেকে ২৫ থেকে ৩০ জন শিক্ষার্থীর বের হওয়ার ভিডিও ভাইরাল হওয়া প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর চিঠি দিয়েছেন কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডা. শেখ মোহাম্মদ কামাল হোসেন। 

চিঠিতে বলা হয়, ২৪ অক্টোবর কুষ্টিয়া সিভিল কার্যালয় এবং এর নিয়ন্ত্রণাধীন বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে ১১-২০ গ্রেডের ১১৫টি শূন্য পদে জনবল নিয়োগের লক্ষ্যে লিখিত পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। বিদ্যমান নিয়োগ বিধির আলোকে নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণপূর্বক যথাযথভাবে সার্বিক নিরাপত্তা বজায় রেখে অত্যন্ত সুষ্ঠু পরিবেশে কুষ্টিয়া শহরের ১৪টি কেন্দ্রে লিখিত পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়। পরীক্ষা চলাকালীন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও ক্লিপে কুষ্টিয়া শহরের একটি বাড়ি থেকে কয়েকজন ব্যক্তিকে বের হতে দেখা যায়। 
ভিডিওতে উল্লেখ করা হয়, বাড়িটি কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. হোসেন ইমামের। ভিডিও ক্লিপটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হওয়ায় নিয়োগ কার্যক্রম সম্পর্কে জনমনে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে।