দেশের সর্ববৃহৎ বেনাপোল স্থলবন্দরের কাস্টমসের আকস্মিক সিদ্ধান্তে অচলাবন তৈরি হয়েছে। পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বেনাপোল ¯’লবন্দর দিয়ে সন্ধ্যা ৬টার পর সব ধরনের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ করেছে বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। ফলে বাংলাদেশ অভিমূখী পণ্যবাহী ট্রাকের দীর্ঘ জটের সৃষ্টি হয়েছে। বিপাকে পড়েছেন আমদানিকারক ও রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীরা। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন পচনশীল পন্য আমদানীকারকরা।
বন্দর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে সপ্তাহে সাতদিন ২৪ ঘন্টা আমদানি রফতানি বানিজ্য চালু রাখতে নির্দেশনা দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। কিন্তু উল্টো গতকাল থেকেই সন্ধ্যা ছয়টার পর সব ধরনের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে স্থবৃতা নেমে এসেছে আমদানি বাণিজ্যে। জানা গেছে, ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে বাংলাদেশ অভিমূখী দেড় হাজারেরও বেশি পণ্যবাহী ট্রাক আটকে পড়েছে। এসব পণ্যবাহী ট্রাকে রয়েছে পচনশীল ফল, মাছ, শিল্প কারখানার বিভিন্ন পণ্য যেগুলোর নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
কার্গো শাখার সিঅ্যান্ডএফ বর্ডারম্যানরা জানান, আগে কাস্টমস সার্ভারে পণ্যবাহী ট্রাক গেটপাশ এন্ট্রি করতে ২ মিনিট সময় নিত। বর্তমান সেটা ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় নিচ্ছে ফলে আরও দীর্ঘায়িত হচ্ছে পণ্যবাহী ট্রাক প্রবেশে। তারা আরো জানান, ভারত থেকে দৈনিক ৩শ থেকে সাড়ে ৪শত ট্রাক পণ্য প্রবেশ করে বেনাপোল বন্দরে। এভাবে সময়ক্ষেপণের কারনে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ব্যবসায়ীরা। দ্রুত গেটপাশ এন্ট্রি শাখায় প্রশিক্ষণ প্রাপ্তদের দিয়ে পরিচালানা করার অনুরোধ জানান। এদিকে আবার নতুন করে সন্ধ্য ৬ টার পর সব ধরনের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ করেছে বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এভাবে এ বন্দর চলতে পারে না। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক লতা বলেন, কয়েকদিন আগে আমাদের সঙ্গে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের একটি মতবিনিময় হয়েছিল। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ প্রস্তাব করেছিল সন্ধ্যা ৬টার পর আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রাখার। আমরা বলেছিলাম বন্দর ব্যবহারকারী সবার সাথে কথা বলে বিষয়টি পরে জানানো হবে। কিš‘ তার আগেই কমিশনার এ সিদ্ধান্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
বেনাপোল বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, এবন্দর দিয়ে আগে প্রতিদিন গড়ে ৪শ থেকে সাড়ে ৪শ টি পণ্যবাহী ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করতো। কিন্তু হঠাৎ এমন সিদ্ধানের ফলে তা নেমে এসেছে ১শ ৮০ থেকে ২শ টিতে। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে দেড়শ ট্রাক পণ্য রপ্তানি হত এখন সেখানে প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০ ট্রাক পণ্য রপ্তানি হচ্ছে।
বেনাপোল বন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির হিসাব অনুযায়ী, প্রতিদিন ১শ থেকে ১শ ৫০ কোটি টাকার পণ্য খালাস আটকে যাচ্ছে। ফলে ব্যবসায়ীরা যেমন বড় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন, তেমনি সরকারও প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে।
বেনাপোল বন্দর পরিচালক শামীম হোসেন বলেন, আমরা বন্দর পরিচালনা করছি কাস্টমসের সিদ্ধান্ত ছাড়া কোনো পণ্য ক্লিয়ারিং করা সম্ভব নয়। তবে এমন আকস্মিক পরিবর্তনের প্রভাব ব্যাপক রাজস্ব ও ব্যবসা উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হবে এ বন্দর।
এদিকে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, শুল্কফাঁকি রোধে কাস্টমস এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাতের আঁধারে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা এ বন্দর দিয়ে বৈধ পণ্যের সাথে অবৈধ ও কাগজপত্রবিহীন পণ্য প্রবেশ ঠেকাতে এ অবস্থার সৃষ্টি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার খালিদ মো. আবু হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে কাস্টমসের এক কর্মকর্তা বলেন, অভ্যন্তরীণ প্রশাসনিক সমন্বয়ের কারণে সাময়িকভাবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দ্রুত সমাধান করা হবে।




Comments