এনটিসির চায়ে গুণগতমানের উত্থান, পরপর দুই নিলামে সর্বোচ্চ বিক্রির রেকর্ড
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ন্যাশনাল টি কোম্পানি (এনটিসি) পরিচালিত ১২টি চা বাগানে এবার চায়ের গুণগতমান উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রাম চা নিলামবাজারে। পরপর দুই নিলামে শতবর্ষী এই প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ বিক্রির রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে—যা দীর্ঘদিন পিছিয়ে থাকা সরকারি চা খাতকে নতুন প্রাণ ফেরানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে।
চট্টগ্রাম চা নিলামের ৩০ নম্বর সেশনে এনটিসির উৎপাদিত চা বিক্রি হয় ৪ কোটি টাকার বেশি। এর পরের ৩১ নম্বর নিলামে বিক্রি বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৬ কোটি টাকায়। দুই নিলাম মিলিয়ে প্রায় ১০ কোটি টাকার বিক্রি এনটিসিকে ইতিহাসের অন্যতম সেরা সাফল্য উপহার দিয়েছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, সঠিক পরিকল্পনা, আধুনিক ব্যবস্থাপনা এবং গুণগতমান নিশ্চিত করাই এই অর্জনের মূল রহস্য।
২০২৪–২৫ অর্থবছরে এনটিসির আওতাভুক্ত তেলিয়াপাড়া, জগদীশপুর, চণ্ডী, পারকুল, মাধবপুর, চাম্পারায়, বিজয়া, প্রেমনগর, পাত্রখোলা সহ মোট ১২টি বাগানে জৈবসারের ব্যবহার বৃদ্ধি এবং সেচ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করা হয়। খরা বা প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেও উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে নেয়া হয় বিশেষ উদ্যোগ। শ্রমিকদের কঠোরভাবে ‘দুটি কুঁড়ি ও একটি পাতা’ নীতি অনুসরণ করে পাতা সংগ্রহের নির্দেশনা দেওয়ায় পাতা ও প্রক্রিয়াজাত চায়ের মানের উন্নতি ঘটে।
জগদীশপুর চা বাগানের ম্যানেজার মনির হোসেন বলেন, “উচ্চপর্যায়ের নিয়মিত মনিটরিং এবং মাঠপর্যায়ের সমন্বিত প্রচেষ্টার ফলেই আমরা মান ধরে রাখতে পেরেছি। শ্রমিক ও কর্মকর্তাদের আন্তরিক শ্রমই এই সাফল্যের মূল শক্তি।” তিনি আরও বলেন, বাজার অনুকূলে থাকলে ভবিষ্যতে বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে এনটিসি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনটিসির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, “ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিয়াউল হাসান দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই প্রতিষ্ঠানিক স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং কাজের গতি বেড়েছে। মান নিয়ন্ত্রণ ও উৎপাদন পরিকল্পনার প্রতি কঠোর নজরদারির ফলই এখন আমরা নিলামবাজারে পাচ্ছি।”
এনটিসির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম বলেন, “জৈবসারের সঠিক ব্যবহার, মানসম্পন্ন পাতা সংগ্রহ এবং আধুনিক সেচব্যবস্থা—এই তিনটি ক্ষেত্রেই আমরা কঠোর ছিলাম। তার ফলেই উৎপাদনে এসেছে দৃশ্যমান পরিবর্তন।”
দেশীয় বাজারে প্রতিযোগিতা থাকলেও গুণগতমান উন্নয়নের মধ্য দিয়ে এনটিসি আবারও শক্ত অবস্থান তৈরি করছে। বাজারে উচ্চমূল্য পাওয়া সরকারি বাগানগুলোর চলমান আধুনিকায়ন উদ্যোগের সাফল্যের স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে।




Comments